নেকবর হোসেন
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রতীক পাবার পর থেকেই নির্বাচনি প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে কুমিল্লা নগরী। পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে –নগরীর গুরুত্বপূর্ণ-জনবহুল এলাকা। দুপুর দুইটার পর থেকেই প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণার মাইকিংয়ে নির্বাচনি আমেজ বাড়িয়ে দিচ্ছে। উপ- নির্বাচন শুধু মেয়র পদে হওয়ায় চার জন প্রার্থীই চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নগরী। সকাল থেকে সন্ধ্যা গণসংযোগ প্রচার-প্রচারণা ও উঠান বৈঠকে সময় পাড় করছে প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকেরা।
নগরীর বুধবার সকাল ১০ টায় ০৩ নং ওয়ার্ডের শাসন গাছা ডাকবাংলো রোডে ও ১৬নং ওয়ার্ডের সংরাইশ এবং বাদ মাগরীব ৭নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর উঠান বৈঠকে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন বিএনপি নেতা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু। এসময় মনিরুল হক সাক্কু বলেন,তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তাকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট দিতে অনুরোধ করছেন ভোটারদের। এখন সিটি কপোরেশনে কেউ ডুকতে পারবে না, আপনারা যাকে ভোট দেন আমার তাতে সমস্য নেই। আপনারা দয়া করে ৯ মার্চ ভোট কেন্দ্র যাবেন, বিগত নির্বাচনের মতো আর হবে না, আমি সাককু বেঁচে থাকলে এটা আর হতে দিমু না।
অপর দিকে, ডা. তাহসীন বাহার সূচনার ২৩ নং ও ২৪ নং ওয়ার্ডের গণসংযোগে গণ মানুষের স্রোত
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা বুধবার সকালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের কোটবাড়ীর গন্ধামতি, সালমানপুর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বার্ড সংলগ্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন ও পথ সভায় বক্তব্য রাখেন । পরে তিনি ২৩ নং ওয়ার্ডের চাঙ্গিনী, বাতাবাড়িয়া,মটপুস্কুনী এলাকায় গণসংযোগ করেন। বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা: তাহসিন বাহার সূচনার গণসংযোগে সাথে ছিলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই বাবলু ,আদর্শ সদর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোতালেব লিটন, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, স্থানীয় কাউন্সিল, ২৩ নং ও ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
এ সময় সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ তাহসিন বাহার সূচনা বাস মার্কায় ভোট চেয়ে সকলের নিকট দোয়া চান। প্রয়াত মেয়র আরফানুল হক রিফাতের এর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে সুযোগ দেওয়ার আহবান জানান। এসময় সাধারণ জনতা দুই হাত তুলে তাকে সমর্থন জানান।
কুমিল্লা নগরীর চকবাজার ফয়সাল হসপিটালের মোড় থেকে, ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, পুলিশলাইন, শাসনগাছা স্টেশন রোড হয়ে অশোকতলা রানীর বাজার, কান্দিরপাড় পূবালীচত্বর এলাকায় গণসংযোগ করেন নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। এসময় তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ অফিসকে নির্বাচনী অফিস বানিয়ে মাননীয় সাংসদ প্রকাশ্যে নির্বাচনকে প্রভাবিত করছেন, মাননীয় সংসদ সদস্যের ভুমিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “এ ধরনের প্রকাশ্য তৎপরতার জন্য তো কোন অভিযোগের প্রয়োজন পড়ে না৷ যেখানে অপরাধ প্রকাশ্যে সংঘটিত হচ্ছে সেখানে কে অভিযোগ করল কে তা আলোচিনার বিষয় হতে পারেন৷ আপনারা দায়িত্বশীল টিম দিয়েছেন৷ তারা পর্যবেক্ষন করে ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই কুমিল্লাবাসী আশা করে৷”
অন্যদিকে, বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে নগরীর চকবাজার থেকে প্রচারণা শুরু করেন এই প্রার্থী পরে পাশের, শুভপুর, চাঁদপুর, জামতলা, গর্জন খোলা, চকবাজার দীঘির পাড়সহ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকায় সাংবাদিকদের ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন,চকবাজারে এখন মানুষ না পারতে আসে। অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রোগীবাহী এম্বুলেন্স পর্যন্ত আটকে যায়। ভয়াবহ অবস্থা দেখলাম। মেগা প্রকল্পের নামে হাতিরঝিলের যেই কপি পেস্টের প্রকল্প দিয়েছে তা কোন কাজে এসেছে তা কুমিল্লার মানুষ দেখছে। প্রকল্পের নাম করে হাঁট বাজার বসিয়ে লুটে পুটে খেয়েছে। তারা আবার জনগণের কাছে ভোট চাইতে আসে। ইনশাআল্লাহ কুমিল্লার মানুষ যেভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে আমার ডাকে এবার কুমিল্লার মানুষ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে। খুব শিগগিরই এই চকবাজারসহ কুমিল্লার শহরের যানজটের লাঘবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং সেটা হবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায়। তিনি আরও বলেন, মামা-ভাগিনা মিলে কুমিল্লার মেঘাপ্রকল্প খেয়েছে। এই শহরে পরিমাপ মতো একটা ড্রেন নাই। তাহলে পানি সরবে কিভাবে? বার বার মানুষকে ধোকা দেয়া যায় না। এসব মেগা প্রকল্পের নাম করে ৬০/৪০ এর ভাগ বসে এটা কুমিল্লার মানুষ শুনে গেছে। সিটি কর্পোরেশনকে কেনাবেচার হাঁট আর হতে দেয়া হবে না। একজনতো আগেই বলে দিয়েছে কাজ কিভাবে ভাগ করবেন। কে কতভাগ পাবেন! যারা নির্বাচনের আগেই ভাগ করে তারা নির্বাচিত হলে কি করবে তা সবাই বুঝে। মানুষকে আর ভূয়া বুঝ দেয়া যাবে না।
এদিকে কুমিল্লা সিটি উপ- নির্বাচনে আচরণ বিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে ৯ জন ম্যাজিষ্ট্র্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেটগণ প্রচার-প্রচারণা শুরু হবার পর থেকে সকল প্রার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করবেন। আচরণবিধি অমান্য করলে নির্বাচনি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন রিটানিং কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ হোসেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও উঠান-বৈঠক পথ সভার মধ্য দিয়ে জমজমাট হয়ে উঠছে নির্বাচনি পরিবেশ। প্রতীক বরাদ্দ অনুষ্ঠানেই রিটার্নিং কর্মকর্তা সকল প্রার্থীদের সতর্ক করে জানান, কেউ সরকারি স্থাপনা ব্যবহার করে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না। কোন সরকারি কর্মকর্তা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। উঠান বৈঠক বা পথ সভার ২৪ ঘন্টা আগে পুলিশকে জানাতে হবে। প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে মাইক দুপুর দুইটার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। এসময় রিটানিং কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কে কোন দলের তা দেখা হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবে।