খলিলুর রহমান।।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র শেখ রেজাউল। তার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি পাঁচ সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। দারিদ্রতা সত্ত্বেও হাল ছাড়েনি পরিবারের বড় সন্তান শেখ রেজাউল। শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতায় এবং বাবার সামান্য আয়ে রাতদিন এক করে পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে রেজাউল। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে।তার এই সফলতায় তার মা-বাবা,শিক্ষক,প্রতিবেশী সবাই অনেক আনন্দিত।
শেখ রেজাউল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ১লাখ ৪ হাজার ৩৮৪জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মেধা তালিকায় ১৫৬তম হয়েছেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এক ঘণ্টার পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় রেজাউলের স্কোর উঠে ৮৩ দশমিক ২৫ । পরীক্ষার কেন্দ্র ছিলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। অদম্য এই শিক্ষার্থীর ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হওয়ার। দারিদ্র্যের সাথে লড়াই শিক্ষকদের উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় চান্স পেয়েছেন মেডিকেলে।
ক্যান্টমেন্ট বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে পাশ করেন । কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন । রেজাউলের ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ার খবর শুনে পরিবার, এলাকাবাসী ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। ওই গ্রাম থেকে প্রথমবার মেডিকেলে চান্স পাওয়া মেধাবী এই শিক্ষার্থীকে সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রেজাউল বলেন- 'আলহামদুলিল্লাহ,প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ তায়ালার। ছোটবেলা থেকেই আমার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। সে লক্ষ্যেই পরিশ্রম করেছি। বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের পাঁচ ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। আমার মা-বাবা সবসময় আমার পড়াশোনার প্রতি যত্নশীল ছিল। আমার শিক্ষকরাও আামকে অনেক উৎসাহ অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সবার দোয়া,সহযোগিতা এবং নিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। শিক্ষকদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।'
রেজাউলের মা হ্যাপি আক্তার বলেন, 'আমি সব সময় দোয়া করতাম আমার ছেলে যেন পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে পারে। ছেলের প্রতি আমার এই বিশ্বাস ছিলো।' ছেলে ভবিষ্যৎ ডাক্তার, এটি ভাবতেই অনেক খুশি তিনি।
ছাত্রের কৃতিত্বে খুশি হয়ে রসায়ন বিভাগের প্রদর্শক মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, কলেজে রেজাউলের নিয়মিত উপস্থিতি ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও তাকে কলেজে অনুপস্থিত থাকতে দেখিনি। পারিবারিক আর্থিক অস্বচ্ছতার কথা জানার পর তার পাশে দাঁড়িয়েছি। সে যেন পড়াশোনা শেষ করে দেশের মানুষের সেবা করতে পারে সেই কামনা করি ।
কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান বলেন, এ বছর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এখন পর্যন্ত ৮৪ জনের সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়েছি। অন্যান্য বছরের হিসেবে এবার আরও বেশি শিক্ষার্থী চান্স পাবে আশা করি। ভিক্টোরিয়া কলেজের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা এবং শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই এই সফলতা সম্ভব হচ্ছে। মেধাবী শিক্ষার্থী শেখ রেজাউলসহ সুযোগ পাওয়া অন্যান্য সকলের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি ।
পড়াশোনা শেষ করে নিজ উপজেলা নবীনগরসহ সমগ্র দেশের দরিদ্র-অসহায় মানুষের সেবা করতে চান শেখ রেজাউল। দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া পেতে চান।