মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় আয়শা সিদ্দিকা ( ৭ ) নামের এক শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে সৎমা তাছলিমা আক্তারকে আটক করেছে থানা পুলিশ। শুক্রবার ( ৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শিশুটির মামা মো. কামাল হোসেনের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে আটক করে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়নের জিরুইন এলাকায়। শিশু আয়শা সিদ্দিকা ওই এলাকার প্রবাসী বাছির উদ্দিনের মেয়ে। এলাকাবাসী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিত শিশু আয়শা সিদ্দিকার মা গত ৯ মাস পূর্বে মারা যান। এরপর শিশুটির বাবা মো. বাছির উদ্দিন মেয়ের দেখাশোনার জন্য কিছুদিন পরে একই এলাকার তাছলিমা আক্তার নামের নারীকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর তিনি প্রবাসে (মালদ্বীপ) চলে যান। এরপর থেকে সৎমা তাছলিমা আক্তার শিশু আয়শা সিদ্দিকার উপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দিনকে অবহিত করলে তিনি শিশুটির সৎমা তাছলিমা আক্তারের বাড়ি গিয়ে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করলে সৎমা তাছলিমা আক্তার শিশু আয়শা সিদ্দিকাকে আর মারধর করবে না বলে কথা দিলেও পরবর্তীতে আবারও সৎমা তাছলিমা আক্তার শিশু আয়শা সিদ্দিকার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে শিশু আয়শা সিদ্দিকাকে প্রচণ্ড মারধর করে। এতে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দিন বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত একাউন্টে শিশুটির উপর নির্যাতনের নানা চিত্র তুলে ধরে ছবি ও ভিডিওসহ একাধিক পোস্ট করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। শিশু আয়শা সিদ্দিকাকে তার মামা মো. কামাল হোসেন আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। বর্তমানে আহত শিশুটি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। এ ব্যপারে শিশুটির বড় ভাই সাবিদুল ইসলাম জয় বলেন, আমার মা মারা যাওয়ার পর আমার বাবা আবারও বিয়ে করেন। আমার বাবা বিয়ের কিছুদিন পর মালদ্বীপ চলে যান। আমিও বাড়ি থাকি না। এই সুযোগে আমার সৎমা আমার ছোট বোন আয়শাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিদিনই নির্যাতন করে আসছেন। গেলো ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আমার বোনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে মারধর করেন, এ সময় আমার বোন প্রাণে বাঁচতে চিৎকার দিলে আমার সৎ মা আমার বোনের গলা চেপে ধরেন। আমি আমার বোনের উপর এই অমানুষিক নির্যাতনের বিচার চাই। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দিন মেম্বার বলেন, মা-হারা শিশু আয়শার উপর তার সৎ মায়ের নির্যাতনের বিষয়ে শিশুটির মামা আমাকে একাধিকবার অবহিত করেছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সৎমা তাছলিমা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে আর নির্যাতন করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু আদতে সে নির্যাতন বন্ধ করেনি, বরং সে শিশুটির উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পরে আমি বাধ্য হয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে ফেসবুকে আমার ব্যক্তিগত একাউন্টে অবুঝ শিশুটির নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও পোস্ট দিই। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানার পরিদর্শক ( তদন্ত ) আমিনুল ইসলাম বলেন, শিশু আয়শা সিদ্দিকাকে সৎমা কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত সৎমাকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।