মোঃ রেজাউল হক শাকিল ।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পতিত জমি ও আঙিনায় শীতকালীন নানারকম সবজি চাষ করা হয়েছে। উৎপাদিত এসব সবজি সংগ্রহ করে আশপাশের অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে হাসপাতালের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগে প্রশংসিতও হচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষ। এতে সমাজের বিত্তবানদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জন্মাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সুশীলসমাজ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিনের উদ্যোগে ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা'র দিকনির্দেশনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পতিত জমি ও আঙিনায় করা হয়েছে নানা ধরনের শীতকালীন সবজির আবাদ। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে শিম, টমেটো, বেগুন, কাঁচামরিচ, লাল শাক, পুঁইশাক, মুলা, পেঁপে, লাউ, শসা, ডাটা, ধনেপাতা ও মিষ্টি আলু। আবাদ করা এসব সবজির মধ্যে কোনো কোনো সবজি ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। সংগ্রহ করা এসব সবজি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশের এলাকার অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। হতদরিদ্র পরিবারের লোকজনও এ সবজি পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যতিক্রম ধর্মী সেবামূলক এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সুশীলসমাজ সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দা বাছির মিয়া বলেন, হাসপাতাল থেকে সপ্তাহে তিনদিন আমাদেরকে সবজি দেওয়া হয়। অভাবের সংসারে এই সবজি পেয়ে আমরা ভরসা পেয়েছি। আমরা মন থেকে হাসপাতালের সবার জন্য দুআা করি। আল্লাহ ওনাদেরকে সুস্থ রাখুক।
সবজি পাওয়া স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বজলু মিয়া বলেন, হাসপাতাল থেকে পাওয়া সবজি আমাদের অনেক উপকারে আসছে। টাকার অভাবে ঠিকমতো তরিতরকারি কিনতে পারি না। জিনিসপত্রের দামও এখন বেশি। আমাদের খারাপ সময়ে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তরিতরকারি দিয়ে আমাদের যে উপকার করছে তা আমরা কখনও ভুলতে পারব না।
মালেকা খাতুন বলেন, আমার কোনো ছেলেপুলে নেই। এই বৃদ্ধ বয়স এসে অতিকষ্টে খেয়ে বেঁচে থাকছি। হাসপাতালের লোকজন আমাকে তাদের সবজি দেওয়ায় আমার অনেক উপকার হচ্ছে। তাদের মতো অন্যরাও যদি সাহায্য করতো আমার মতো দুখীর আর দুঃখ থাকতো না।
এ ব্যপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, "এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা কাজ করে যাচ্ছে। বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি- বেসরকারি দপ্তর এর অনাবাদি ও পতিত জমি এবং আঙিনা বিভিন্ন শাকসবজি চাষের মাধ্যমে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে আমাদের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে। এর ফলে একদিকে যেমন বসতবাড়ি এবং প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে উৎপাদিত সবজি নিরাপদও হবে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনাবাদি ও পতিত জমিতে সবজি চাষ এবং উৎপাদিত সবজি হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মহোদয়ের এমন উদ্যোগ মানুষকে অনাবাদি ও পতিত জমিতে চাষাবাদে উৎসাহ যোগাবে। উপজেলা কৃষি অফিস সময়ে সময়ে উক্ত কমপ্লেক্সে সবজি চাষাবাদে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে আসছে। ভবিষ্যতেও এই ধরনের কাজে সবাইকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজই হচ্ছে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা। আমাদের চাকরিটাই হচ্ছে সেবামূলক। আমারা যারা চিকিৎসক বা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত মানব সেবায় আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি উদ্যোগ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পতিত জমি ও আঙিনা পরিষ্কার করে শীতকালীন সবজির আবাদ নিশ্চিত করেছি। এসব সবজি চাষে আমার ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীরা নিয়মিত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা সরকারি বেতন-ভাতা পাই। বাজার থেকে সবজি কিনে খেতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অসহায় হতদরিদ্র মানুষজন নিয়মিত সবজি কিনে খেতে পারে না। তাই আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে এসব সবজি অসহায়দের মধ্যে ভাগ করে দিতে সিদ্ধান্ত নিই। এতে হতদরিদ্র পরিবারগুলো উপকৃত হবে, আমরাও মানসিকভাবে শান্তি পাব। কাউকে কোন কিছু দেওয়ার মতো তৃপ্তি বা সুখ আর অন্যকিছুতে নেই।