মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করে ফলন ভালো হওয়ায় ও বাজারে আশানুরূপ মূল্য পাওয়ায় খুশি কৃষক সোহেল হক। এটি বিদেশি সবজি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো। কম খরচে ক্যাপসিকাম চাষ করে বেশ লাভবানও হচ্ছেন তিনি। গত বছরও তিনি পরীক্ষামূলক ক্যাপসিকাম চাষ করেছিলেন। কৃষক সোহেল হক উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এ দিকে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ক্যাপসিকাম এ দেশে সবার কাছে মিষ্টি মরিচ নামে পরিচিত। এ মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত এর ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। ক্যাপসিকাম সবুজ, লাল, হলুদ ও বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। এ মরিচ ঝাল নয়, আবার চিনির মতো মিষ্টিও নয়। মরিচের ঘ্রাণ আছে, তাই সালাদের জন্য এই মরিচ খুবই উপযুক্ত। ক্যাপসিকামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও জিংক রয়েছে। এর কাঁচা ফল সালাদ হিসেবে খুবই মুখরোচক ও পুষ্টিকর। তাছাড়া ক্যাপসিকাম রান্না করে সবজি হিসেবেও খাওয়া যায়। এ সবজি চাষে খরচ কম হয়। এতে কৃষক লাভবান হয়।
ক্যাপসিকাম চাষি সোহেলের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি একসময় প্রবাসী ছিলেন। পরিবার পরিজন ছেড়ে সুদূর প্রবাসে থাকতে হতো তাকে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর দেশে আসতেন। বিদেশের মাটিতে মন বসতো না তার। পরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই দেশে ফিরে আসেন সোহেল। এরপর যুব উন্নয়ন থেকে কৃষির ওপর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তারপর থেকে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। প্রথমদিকে স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও দিন দিন তিনি কৃষি কাজে পুরোপুরিভাবে মননিবেশ দেন। এ কাজে তিনি অনলাইন থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছেন। এছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসারদের পরামর্শ নিয়মিত নিচ্ছেন তিনি। তার সবজি চাষ পর্যবেক্ষণ করতে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছেন। গত বছর পরীক্ষামূলক ক্যাপসিকাম চাষ করে থাকলেও এ বছর তিনি অন্যান্য সবজির পাশাপাশি বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম আবাদ করেছেন। এতে যা ব্যয় হয়েছে তার দ্বিগুণ লাভ হওয়ার কথাও জানান তিনি। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ক্যাপসিকাম বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। ফলন ভালো হওয়ায় দামও পাচ্ছেন ভালো। আগামী বছর ক্যাপসিকাম আবাদের পরিসর আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথাও জানান তিনি।
জানা যায়, নিজের জমির সাথে অন্যের জমি বন্ধক নিয়ে তিনি কৃষি কাজ পরিচালনা করে আসছেন। এ বছর ৩১ শতক জমিতে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন তিনি। এ বছর দু’দুটো ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ায় সবজি আবাদের পরিস্থিতি কিছুটা প্রতিকূলে থাকলেও ক্যাপসিকাম চাষ করে লাভবান হয়েছেন তিনি। বিদেশি সবজি ক্যাপসিকামের আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুশি। ক্যাপসিকামের পাশাপাশি এ বছর তিনি বিদেশি সবজি স্কোয়াশ, লাল শাক, শিম, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি ও ফুলকপি সহ নানা ধরনের শীতকালীন সবজি আবাদ করেছেন। এতে বেশ লাভবানও হচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে তিনি পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ক্যাপসিকাম বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। এ সবজির চাষি কম থাকায় তিনি ক্যাপসিকামের দামও পাচ্ছেন ভালো।
চাষি সোহেল বলেন, প্রিয়জনদের ছেড়ে বিদেশ বিভুঁই কাটিয়েছি অর্থ উপার্জনের আশায়। তেমন কোনো ভালো ফলাফল না পেয়ে অবশেষে দেশে ফিরে আসি। প্রথমে স্বল্প পরিসরে শাকসবজির আবাদ শুরু করি। পরে চাষে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমি বন্ধক নিয়ে দিন দিন সবজি সহ অন্যান্য ফসল আবাদের পরিসর বৃদ্ধি করি।
তিনি আরও বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে জমি তৈরি করেছি। এই পদ্ধতিতে জমি তৈরি করলে বৃষ্টিতে ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। এবছর ৩১শতক জমিতে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। আশানুরূপ ফলন ও দাম ভালো পেয়েছি। এছাড়াও বিদেশি সবজি ক্যাপসিকামের পাশাপাশি নানারকম শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। আমি আশাবাদী ক্যাপসিকাম সহ অন্যান্য শীতকালীন সবজি চাষে আমি সাফল্য পাব। বর্তমান পাইকারি বাজারে ক্যাপসিকাম প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ দরে বিক্রি করছি।
এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সচরাচর এই সবজির আবাদ না থাকায় বাজারে এর চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো। যার ফলে ক্যাপসিকামের বাজার দরে সন্তুষ্ট চাষিরা। বেশিরভাগ এই ক্যাপসিকাম বিভিন্ন রিসোর্ট ও অভিজাত হোটেল রেস্তোরাঁয় ব্যবহার করা হয়। তবে অনেকেই মনে করছেন এ সবজির আবাদ বাড়লে দেশি সবজির মতো এ সবজিও এ অঞ্চলের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের হাতের নাগালে আসবে। এ সবজি আবাদে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে কৃষকদের উৎসাহিত করার কথাও বলছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় একটি সবজি। ক্যাপসিকাম বিদেশি সবজি হওয়ায় অন্যান্য সবজির তুলনায় এর দামও অনেক বেশি। ক্যাপসিকামের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে বড় বড় হোটেল ও রেস্টুরেন্টে অনেক চাহিদা রয়েছে। ক্যাপসিকাম ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস। নিয়মিয় ক্যাপসিকাম খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযোগী। ক্যাপসিকাম সারা বছরই চাষ করা সম্ভব। এটি চাষ করে কৃষকেরা স্বাবলম্বী হতে পারেন। সাথে সাথে আমাদের কৃষিতেও বৈচিত্র আসবে। ব্যাপক পরিসরে বানিজ্যিকভবে চাষ করলে বিদেশে রপ্তানিরও সম্ভাবনা আছে। এই উপজেলা ক্যাপসিকাম চাষের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্রাহ্মপাড়ায় কৃষকদেরকে উচ্চমূল্যের এই সবজি চাষে আগ্রহী করার জন্য উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাপসিকাম চাষের জন্য দো-আশ বা বেলে দো-আশ মাটি ভালো। এটি খরা কিংবা গোড়ায় পানি জমে থাকা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না।