মোঃ রেজাউল হক শাকিল।
হাতিশুঁড় হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সম্পদ এবং এটি বিভিন্নভাবে মানুষের উপকারে আসে। এটি আমাদেরকে অক্সিজেন সরবরাহ করে, বায়ুদূষণ কমায়, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে, বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি করে, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এটি পুরনো দালান ঘেঁষে, বসতবাড়ির আঙিনায়, ঝোপঝাড়ে ও রাস্তার ধারে অন্য আগাছার মাঝে জন্মায়। এ উদ্ভিদের বাঁকানো পুষ্পদণ্ডে ফুটে থাকে সাদা সাদা ফুল। গজদন্ত অর্থাৎ হাতির দাঁতের মতো শুভ্র এই ফুল। এটি মোটামুটি এক দেড় ফুট লম্বা হয়। এর কাণ্ড ফাঁপা, নরম। সারা দেহে ছোট ছোট রোম আছে। এটির ওপরের দিকের কাণ্ড চৌকো, নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত গোলাকার। সংস্কৃত নাম শ্রীহস্তিনী। পরিবেশ বান্ধব ও বহুগুণে ভরা এ উদ্ভিদটি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বিলুপ্তির পথে। সংরক্ষণের অভাবেই হাতিশুঁড় ও এ জাতীয় নানা ঔষধি উদ্ভিদ এবং গাছ কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
জানা গেছে, হাতিশুঁড় এক প্রকার একবর্ষজীবী আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হেলিওট্রোপিয়াম ইনডিকাম। এর অর্থ ফুলগুলোর সূর্যের দিকে মুখ থাকে। গাছটি বোরাজিনেসি পরিবারভুক্ত। বিজ্ঞানীরা এই উদ্ভিদটির ভেষজগুণ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন। তাদের আশা- অদূর ভবিষ্যতে এই উদ্ভিদ থেকে নানা জটিল রোগের ওষুধ তৈরি হবে। বর্তমানে এ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেষজ ঔষধ। আর তা ব্যবহৃত হচ্ছে ইউনানি চিকিৎসকদের মাধ্যমে মানুষের চিকিৎসায়।
ইউনানি চিকিৎসকদের তথ্যমতে, হাতিশুঁড় উদ্ভিদের রয়েছে অসামান্য উপকারিতা। এই উদ্ভিদ দেহে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে লাল চাকা চাকা দাগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। যেকোনো ফোলায় পাতা বেঁটে অল্প গরম করে ফোলায় লাগালে, ফোলা কমে যায়। জ্বর ও কাশিতে এই উদ্ভিদের মূল জলের সঙ্গে ফুটিয়ে ক্বাথও তৈরি করে ব্যবহার করা হয়। বিষাক্ত পোকার কামড়ে পাতার রস লাগালে জ্বালা এবং ফোলা কমে যায়। আঘাতজনিত ফোলায় পাতা বেঁটে অল্প গরম করে লাগালে, ফোলা এবং ব্যাথা কমে যায়। যাদের সর্দি লাগবে তারা এই হাতিশুঁড়ের পাতা ছেচে দুই চামচ পরিমাণ রস খেলে এতে করে সর্দি ভাল হয়ে যায়। টাইফয়েড রোগে এই উদ্ভিদটির পাতা হতে পারে কার্যকরী সমাধান। এর পাতার রস হালকা গরম করে পানিতে মিশিয়ে খেলে টাইফয়েড ভালো হয়। একজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিশুঁড় উদ্ভিদের পাতা থেঁতলে আক্রান্ত স্থানে কিছু দিন ব্যবহারে একজিমা সেরে যায়। রিউম্যাটিক বাতে রেড়ির তেলের সঙ্গে এ উদ্ভিদের পাতার রস মিশিয়ে সেদ্ধ করে গাঁটে লাগালে সমস্যা দূর হয়। দাঁতের মাড়ি ফোলা রোগী হাতিশুঁড়ের মূল চিবালে মাড়ি ফোলা কমে যায়। কাটাছেঁড়া স্থানে হাতিশুঁড়ের পাতা থেঁতলে রস দিলে এতে কাটা ছেঁড়া ঘুচে যাবে। ব্রণ সমস্যায় হাতিশুঁড় গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতো করে দুপুরে গোসল করতে যাবার এক ঘণ্টা আগে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রণ সারে এবং নতুন করে আর ব্রণ হয় না। ফ্যারিঞ্জাইটিস রোগে হাতিশুঁড় উদ্ভিদের পাতার রস অল্প গরম জলে মিশিয়ে গার্গল করলে এ রোগ সেরে যায়।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি মেডিকেল অফিসার ডা. সোহেল রানা বলেন, এলোপ্যাথি চিকিৎসার প্রসার ও ইউনানি চিকিৎসার ভাটায় এই অঞ্চলসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় হাতিশুঁড়ের মতো আরও বহু ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছ দিন দিন প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। ঔষধি গাছ ও উদ্ভিদ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হওয়া জরুরি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী এলোপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা চিকিৎসা ব্যবস্থা ইউনানি চিকিৎসাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউনানি চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন এবং ফ্রি বিতরণের জন্য ভেষজ ঔষধ দিয়েছেন। আমি মনে করি নাগরিক হিসেবে ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছের পরিচর্যা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।