মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
প্রকৃতির সৃষ্টি নানা উদ্ভিদ ও গাছেই আছে বিভিন্ন রোগের ঔষধ। সেই আদিকাল থেকেই মানুষ এসব ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছ ব্যবহার করে সুস্থ হয়েছেন নানা অসুখবিসুখ থেকে। এসব ঔষধি উদ্ভিদের মধ্যে ঔষধি গুণে ভরা থানকুনি পাতা মানবদেহের নানা ধরনের রোগে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। একটা সময় থানকুনি পাতার খুব কদর ছিল। বাড়ির বয়োজ্যষ্ঠরা এই পাতার খুব গুরুত্ব দিতেন। শরীর সুস্থ রাখতে এই পাতার জুড়ি নেই। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে এর উপকার বলে শেষ করা যাবে না। অথচ এই আধুনিক চিকিৎসার সময়ে এসে অবহেলায় জর্জড়িত হয়ে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি উদ্ভিদ থানকুনি। এটিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষের আওতায় আনার পরামর্শ স্থানীয় সচেতন মহলের।
ইউনানি চিকিৎসকরা বলছেন, থানকুনি পাতার রস খুবই উপকারী। তবে মধুর সঙ্গে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য অসুখ সারাতে সাহায্য করে। তুলসি ও গোল মরিচ দিয়ে থানকুনি পাতা খেলে তা ঠান্ডা এবং জ্বরও নিরাময় করে। গলা ব্যথা এবং কাশি নিরাময়ের জন্য, থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে সামান্য চিনি মিশিয়ে পান করুন। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনও ভাবে চোট পেলে কিংবা কেটে গেলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে থানকুনি পাতার কোনও জুড়ি নেই। থানকুনি পাতা বেটে কাটা জায়গায় লাগালে ব্যথা কম হবে আর রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে। এছাড়াও অনেকের দেহেই অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত শুদ্ধ থাকে। ফলে শরীরের প্রতি কোশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। ফলে অনেক সমস্যার উপশম হয়। হাত ফুলে যাওয়া, পা ফুলে যাওয়া এসব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার মধ্যে থাকে নানা রকম খনিজ উপাদান, যা তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যে কারণে অনেক জটিল রোগ থেকে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। আমাশয় থেকে আলসার সেরে যায় এই পাতার গুণেই। আর নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। ক্রনিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে খুবই ভালো থানকুনি পাতা। মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য খুব ভালো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা দুই কমে। এর ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনসেল ভালোভাবে কাজ করতে পারে। স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।
স্থানীয় বাসিন্দা জুনাব আলী ( ৬৯ ) বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি প্রায়ই থানকুনি পাতা দিয়ে ভর্তা, শাক ও তরকারি রান্না করা হতো। এতে আমাদের অসুখবিসুখ তেমন হতো না। সে সময় পথের ধারে, বাড়ির আঙিনায় ও জমিতে অহরহ থানকুনি গাছ দেখা যেতো। গ্রামীণ জনপদে এখন আর সেরকমভাবে এই ঔষধি গাছটি দেখা যায় না।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা বলেন, আমাদের দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছ। এটা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিলুপ্তির পথে যেসব ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছ সেগুলো সংরক্ষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এই সংরক্ষণের দায়িত্বটা আপামর বাঙালির। এই সংরক্ষণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং মানুষের চিকিৎসায় এসব গাছ ও উদ্ভিদ কাজে আসবে।