মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
রাতের আধারে ইউনিয়ন পরিষদের পাহারাদার এক গ্রাম পুলিশের সহায়তায় অভিনব প্রন্থায় হার্ড ডিস্ক চুরি ও ইউনিয়ন পরিষদের সকল তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেছে ইমন নামে এক ডিজিটাল প্রতারক ও তার সহযোগী গ্রাম পুলিশ এনামুলের বিরুদ্ধে৷ এ ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান রিপন ভূইয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং ঐ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৫ নং দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আনিসুর রহমান রিপন ভূইয়া বলেন, গত ২৪ শে আগস্ট বৃহস্পতিবার পরিষদের কাজ শেষ করে বিকালে বাসায় চলে যাই৷ পরে দুইদিন সরকারি ছুটি থাকায় রবিবার দিন ২৭ শে আগস্ট অফিসের কম্পিউটার অপারেটর জানায় কম্পিউটার চালু হচ্ছে না৷ তাই ব্রাহ্মণপাড়া থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মুন্নাকে আনার পরে আমরা জানতে পারি যে এটার হার্ড ডিস্ক পাল্টানো হয়েছে৷ এরপর সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং কম্পিউটার অপারেটর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করে৷ পর দিন ২৮শে আগস্ট আমি নিজে বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করি৷ একই দিনে দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বাকী গ্রাম পুলিশগন ঘটনার রাতে পরিষদ পাহাড়ায় থাকা এনামুল হককে দায়ী করে লিখিত অভিযোগ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর৷ এনামুল গ্রাম পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাধ করলে ওঠে আসে হার্ড ডিস্ক চুরির মূল হোতা ইমনের নাম৷ উপজেলার বেজুরা গ্রামের মোঃ সিদ্দিক মিয়ার ছেলে ইমন (২৮)৷
সে ২০২১- ২০২২ এ এক বছরের ইউনিয়ন পরিষদে অস্থায়ী কম্পিউটার অপারেটর দায়িত্বে ছিল৷ এখান থেকে শুরু হয় তার জালজালিয়াতীর হাতি খড়ি৷ তারপর থেকে ভূয়া জন্মসনদ, ভূয়া মৃত্যু সনদ, বানিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিত৷ তার বিষয়ে অনেক অভিযোগ পাই। তা প্রমানিত পেয়ে তাকে পরিষদে থেকে তাকে বের করে দেই।
তার পর থেকে এলাকার কিছু খারাপ প্রকৃতির মানুষের সাথে মিশে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য চুরির মিশনে নামে সে৷ আর এ চুরির সাথে ছিল আমার পরিষদের গ্রাম পুলিশ বেজুরা গ্রামের মৃত আবুল কাসেমের ছেলে এনামুল৷ যা ইতিমধ্যে প্রমানিত হয়েছে৷ এই চুরির সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট। এবং গ্রাম পুলিশ এনামুল আর ইমনকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। পরিষদের গ্রাম পুলিশ মোঃ নজির আহাম্মদ, মোঃ শাহ জাহান,মোঃ তনু মিয়া, কামরুল ইসলাম জানায় এনামুল এলাকার সকল প্রকার চুরি, মাদক প্রচার, গরু চুরির সাথে জড়িত৷ ঘটনার রাতে এনামুল পরিষদ পাহাড়ায় থাকা অবস্থায় চুরি হয়৷ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা সকল গ্রাম পুলিশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করছি৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলাকার স্থানীয়রা জানান, ইমন ভাই কম্পিউটারে ভালো দক্ষ রয়েছে। ইমন এটা কাজে লাগিয়ে অনেক মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আত্মসার্ত করেছে৷ তাছাড়া ইয়াবা, সেবন, বিক্রি, ভূয়া সনদ, কাগজপত্র সব কিছু তৈরি করতে পারে সে৷ টাকার বিনিময়ে ইমন যে কোন কাগজ তৈরি করতে পারে এটা পরিষদের বা মন্ত্রনালয়৷ আর তার দুই ভাই বিল্লাল হোসেন এবং মামুন এর প্রধান সহযোগী বলে বাদী করেন এলাকাবাসী। তাদের উপজেলার পাশে দুইটি কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম পুলিশ এনামুল হক বলেন ঘটনার রাতে ইমন তার এক বন্ধু নিয়ে পরিষদে এসে আমাকে ডাকা ডাকি করে পরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বলে আমাদের ঠান্ডা এবং সিগারেট খাওয়ায় পরে আমি দোকানে যাই৷ তারপরে ১০ মিনিট পরে চলে যায় তারা৷ ইমন আমার এত বড় ক্ষতি করবে আমি বুঝতে পারি নাই৷ এখন আমি লজ্জায় এলাকাতে যেতে পারি না৷ অভিযোক্ত প্রতারক ইমনকে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি৷ তবে তার বড় ভাই মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টি সামাজিক ভাবে শেষ করার চেস্টা চলছে৷ পরিষদের হার্ড ডিস্ক চুরির বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন, ইমনের নামে অভিযোগ পাওয়ার পরে তাকে থানায় ডাকা হয়৷ পরে জিজ্ঞাসাবাদ এর একপর্যায়ে এসে চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন। চুরি হওয়া হার্ড ডিস্কটি তার কাছ থেকে উদ্বার করি। এবং এই হার্ড ডিস্কটি পরিষদের কি না জানার জন্য কুমিল্লায় যাচাই করার জন্য পাঠানো হয়েছে। যাচাইয়ের শেষ বলা যাবে হার্ড ডিস্কটি পরিষদের কিনা। তার বিষয়ে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা তার বিষয়টি তদন্ত করছি। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স.ম আজহারুল ইসলাম বলেন, দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চুরির ঘটনায় আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি৷ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার ভূমি কাউছার হামিদ কে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷