মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
গবাদিপশু জবাই করার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দেওয়ার বিধি থাকলেও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় নেই এর প্রয়োগ। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চলছে পশু জবাই ও মাংস বিক্রি। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলায় নিয়োজিত ভেটেরিনারি সার্জন কিংবা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের এই সনদ দেওয়ার কথা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নীরব ভূমিকায় সনদ বিহীন জবাইয়ের ওইসব পশুর মাংস কতটা স্বাস্থ্যসম্মত এখন এ প্রশ্ন জনমনে। এছাড়াও পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট স্লটার হাউস না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হচ্ছে পশু জবাই, এসবের নেই তদারকি।এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, উপজেলার বড়ধুশিয়া, ধান্যদৌল, দুলালপুর, বালিনা খালপাড়, সাহেবাবাদ, উপজেলা সদর, বেজুড়া, চান্দলা, শশীদল, বাগরা, মাধবপুর ও মহালক্ষীপাড়ায় প্রতিদিন জবাই হয় পশু, বসে মাংসের হাট। পশু জবাইয়ে আইনগত বিধি থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকায় হরহামেশাই জবাই হচ্ছে অসুস্থ পশু। মরা পশুর মাংস বিক্রির অভিযোগও রয়েছে ওই উপজেলায়। গত কয়েকমাস আগে মরা গরুর মাংস বিক্রির দায়ে সদর বাজারের কিছু অসাধু মাংস ব্যবসায়ীদের জরিমানা ও কারাদণ্ড দিয়েছিল ভ্রাম্যমান আদালত। স্থানীয়রা মনে করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তদারকি না থাকায় এ ধরনের কার্যকলাপ চালাতে পারছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। পশু জবাইয়ের বিধি যথাযথ পালনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত মাংসের নিশ্চিয়তার দাবি জানান স্থানীয়রা।
এলাকার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এসব গবাদিপশুর বিভিন্ন জটিল রোগ থাকতে পারে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া জবাই করা এবং তার মাংস বাজারে বিক্রি করা আইনত অপরাধ হলেও তা উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে জবাই করা হচ্ছে গবাদিপশু, এবং বিক্রি করা হচ্ছে তার মাংস। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এলাকার বাসিন্দাদের।
গরুর মাংস কিনতে আসা আবু সালেহ বলেন, 'সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য বাজারে গরুর মাংস কিনতে এসেছি। কিন্তু গরু সুস্থ নাকি অসুস্থ তা জানি না। গরু পরীক্ষা না করিয়ে জবাই হচ্ছে সবখানেই। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা উচ্চমূল্য দিয়েও ভেজালমুক্ত মাংস কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।'
উপজেলার মহালক্ষীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, 'সবার অগোচরে পশু জবাই হয়। নির্দিষ্ট কসাইখানা নেই। ফলে সুস্থ নাকি অসুস্থ পশুর মাংস টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছি তা আমরা কেউই জানি না। সঠিক নিয়ম মেনে পশু জবাই হলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা ভুক্তভোগী হতাম না।'
উপজেলার চান্দলা বাজারে মাংস ক্রয় করতে আসা মশিউর রহমান বলেন, 'জবাইকৃত গরুটি সুস্থ না অসুস্থ তা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। একরকম বাধ্য হয়েই আমরা প্রয়োজনের কারণে মাংস কিনছি। সঠিক নিয়ম মেনে গরু জবাই হলে আমাদের মতো ভুক্তভোগীরা স্বাস্থ্যসম্মত মাংস পাওয়ার নিশ্চয়তা পেতো।'
গবাদি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ছাড়পত্র চিকিৎসক দিচ্ছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলার সদর বাজারের রাসেল বলেন, 'আগে একসময় ডাক্তার আসতো, এখন কেউ আসেন না। তবে প্রতিমাসে একবার আমাদেরকে অফিসে ডেকে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার নানা নিয়মকানুন ও কাগজপত্রের বিষয়ে আলোচনা করেন। '
পশু জবাইয়ে জন্য স্লটার হাউস আছে কিনা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপজেলার বড়ধুশিয়া বাজারের মাংস ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন, 'না, তবে আমরা খালের পাশে গরু জবাই করি। পরে পানি ঢেলে গরুর রক্ত ধুয়ে ফেলি।'
এতে পরিবেশ দূষণ হয় কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি নিরুত্তর থাকেন।
উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর পারভীন সুলতানা বলেন, 'বাজারে মাংস বিক্রির জন্য পশু জবাইয়ের সরকারি বিধিবিধান রয়েছে। পশু জবাইয়ের পূর্বে পশুটি সুস্থ কিনা এটা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক দেখে সার্টিফাইড করে একটি সার্টিফিকিট দেবেন। এটা মাংস দোকানী দোকানে ঝুলিয়ে রেখে ওই পশুর মাংস বিক্রি করবেন। পশুটি দিবালোকে একজন হুজুরের মাধ্যমে জবাই করতে হবে। আর আমি পশুর রানে দুটো সীল দিয়ে দেবো। কিন্তু বর্তমানে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: ইজমাল হাসান বলেন, 'সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্লটার হাউসে গবাদিপশু জবাইয়ের নিয়মনীতি চালু আছে। একসময় ব্রাহ্মণপাড়ায়ও স্লটার হাউস ছিল, ব্রাহ্মণপাড়ায় আপাতত নির্দিষ্ট কোনো স্লটার হাউস নেই। তবে স্লটার হাউস হওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আপাতত স্লটার হাউস না থাকায় একইস্থানে উপজেলার সব পশু জড়ো করে জবাই করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক মাংস বিক্রেতা রয়েছে, এদিকে আমাদের এতো লোকবল নেই যে সব জায়গায় পাঠানো সম্ভব। আর পশু পরীক্ষানিরীক্ষা করে সার্টিফিকিট দেওয়ার কথা উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন। সে পদটিও আপাতত খালি রয়েছে। তবে স্লটার হাউস হয়ে গেলে ও ভেটেরিনারি সার্জনের খালি পদটি পূর্ণ হয়ে গেলে সঠিক নিয়মেই নির্দিষ্ট স্লটার হাউসে উপজেলার সব মাংস বিক্রেতার গবাদিপশু জবাই হবে। স্লটার হাউসটি উপজেলার সাহেবাবাদে হওয়ার কথা রয়েছে