মো. রেজাউল হক শাকিল:
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় কলেজ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা’কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক বিদায় ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
গোপালনগর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান সোহেলের সঞ্চালনায় ও মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ ও কুমিল্লা জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক মোঃ সেলিম রেজা সৌরভ, মাধবপুর আলহাজ্ব আবু জাহের কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম, শিদলাই আমির হোসেন জোবেদা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ খলিল উদ্দিন আখন্দ, বড়ধুশিয়া কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন, সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির, আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন সরন, চান্দলা কেবি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রাখাল চন্দ্র শীল।
ইউএনওর সোহেল রানার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তারা এবং উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ আবেগাপ্লুত হয়ে যান। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন কলেজ থেকে আগত শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মাধবপুর আলহাজ্ব আবু জাহের কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কীভাবে একটি জনপদের সামগ্রিক পরিস্থিতি বদলে দিতে পারেন তা দেখিয়ে দিয়েছেন বিদায়ী ইউএনও সোহেল রানা। কলেজের নিয়োগ পরীক্ষায় নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন যা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সেই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও ইভটিজিং প্রতিরোধে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন সরন বলেন, ইউএনও সোহেল রানা স্যার কেবল একজন যোগ্য প্রশাসকই নন সেই সঙ্গে তিনি একজন সর্ববিষয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিও। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রনয়ন থেকে শুরু করে স্বচ্ছ একটি নিয়োগ পরীক্ষা কীভাবে করতে হয় তিনি তা করে দেখিয়েছেন। স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা না হলে আমি এখানে নিয়োগ পেতাম না।
শিদলাই আমির হোসেন জোবেদা কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা মহোদয় সবসময় ব্রাহ্মণপাড়ার সকল শিক্ষকদের পাশে থেকেছেন। আমরা তাঁকে সুখ-দু:খে পাশে পেয়েছি। সততা ও সাহস নিয়ে তিনি এগিয়ে এসে অনেক শিক্ষকদের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছেন। তাঁর এ বিদায়ের মাধ্যমে আমরা এক হ্যামিলনের বাশিওয়ালাকে হারাবো।
বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ খলিল উদ্দিন আখন্দ বক্তব্য দিতে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, ইউএনও সোহেল রানা স্যার উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ বঙ্গবন্ধু কলেজের সভাপতি। আমি সেই সুবাদে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার যে এতোটা সৎ ও পরিশ্রমী হতে পারেন তা তাঁকে না দেখলে জানতে পারতাম না। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় সামাজিক উন্নয়নে তিনি এক জাগরণ সৃষ্টি করেছেন।
সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ ও কুমিল্লা জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক মোঃ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন, ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও সোহেল রানা একজন শিক্ষা বান্ধব কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি উপজেলার প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর বিদায়ে ব্রাহ্মণপাড়াবাসী একজন শিক্ষকবান্ধব অভিভাবককে হারাবে। এ সময় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশীপ লাভ করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানাকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল রানা সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতিজ্ঞতা জানিয়ে তাঁর সামনের দিন গুলোতে তিনি যেন তাঁর সততা ও সুনাম অক্ষণ্ন রেখে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারেন সে দোয়া কামনা করেন।