শফিউল আলম রাজীব:
পৌরসভার ডাম্পিং সেন্টার না থাকায়, কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌর শহরের আনাচে-কানাচে এমনকি বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের পাশে স্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড়। আর সেখান থেকে দিন-রাত সার্বক্ষণিক পঁচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, ছড়াচ্ছে ডেঙ্গুসহ নানা রোগ বালাই। পাশাপাশি ময়লার স্তূূপগুলো এখন মশা উৎপাদনের উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে পৌর এলাকায় মশার উপদ্রব ভয়ানক হারে বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। শনিবার বিকেলে এ প্রতিবেদন তৈরী করার আগ মুহৃর্ত পর্যন্ত আটজন ডেঙ্গুরোগী দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেবীদ্বার পৌরসভাটি দীর্ঘ ২১ বছর পর গত ১৭ জুলাই প্রথমবারের মতো নির্বাচন হয়। এ পৌরসভায় বর্তমানে লোকসংখ্যা লক্ষাধিক। কিন্তু নাগরিক সুবিধা রয়েছে আগের মতোই। এ দীর্ঘসময়ে ময়লা আবর্জণা ফেলার মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘ড্রাম্পিং সেন্টার’ তৈরী হয়নি। প্রায় প্রতিটি সড়কই চলাচলের অযোগ্য, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বিল্ডিং কোড না মেনে সড়কের ওপরই যার যেভাবে ইচ্ছে নির্মাণ করছেন ছোট বড় ঘরবাড়ি ও বহুতল ভবন। বিভিন্ন স্থানে ডোবা নালাগুলো সারা বছরই ভরে থাকে আবর্জনা ও কচুরীপানায়। বিশেষ করে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বড় আলমপুর, ৭নং ওয়ার্ডের সাইলচর, চাপানগর, ৫ নং ওয়ার্ডের দেবীদ্বার সদর, ২ নং ওয়ার্ডের পান্নারপুল, ভিংলাবাড়ি, ৯ নং ওয়ার্ডের বারেরা এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে স্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। যা থেকে মশা উৎপাদনসহ ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই। তা ছাড়া দুর্গন্ধে নাকে কাপড় দিয়ে পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ও ভোক্তভূগীদের পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগ দেয়ার পরও পৌর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি মশা নিধনের জন্য পৌরসভায় উন্নতমানের একাধিক ফগার মেশিন থাকলেও তা মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হয় শুধু লোক দেখানোর জন্য। এ কারণে পৌর এলাকায় মশার উপদ্রব দিন দিন বাড়ছে। আর সেই সাথে জনসাধারণের মাঝে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর এলাকার একাধিক নাগরিক জানান, পৌরসভার অধিকাংশ সড়কই খানাখন্দে একাকার। ড্রেনেজ ব্যবস্থা তেমন নেই বললেই চলে। যে দু’চারটি আছে তা খুবই নোংরা অবস্থায় পড়ে আছে। তা ছাড়া বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখায় মশা উৎপাদনের কারখানাসহ দুর্গন্ধে চলা দায় হয়ে পড়েছে। এমনকি এসব ময়লার কারণে দিনে বা রাতে মশার কামড়ে বাসাবাড়িতে বাস করা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এমনকি ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছেন পৌরবাসী।
শনিবার বিকেলে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ মঞ্জুর রহমান ও উপস্থিত কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মুহাম্মদ নাজমুল আলম জানান, দেবীদ্বারে এ পর্যন্ত ৬৫জন রোগীর ডেঙ্গু সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনকে কুমিল্লা মেডিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ও ৪৮ জনকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হযেছে। আজকে ৪ নতুন রোগী ভর্তীসহ বর্তমানে আরো ৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা জানান, দেবীদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবোর্চ্চ ১০ রোগী ভর্তী হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ যথাযথ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারা আরো বলেন, সারা দেশেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মারাত্মকভাবে বাড়লেও দেবীদ্বারে সে হিসেবে অনেকটাই কম।
দেবীদ্বার পৌর মেয়র মো. সাইফুল ইসলাম শামীম বলেন, মশা নিধনে ফগার মেশিন দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় স্প্রে করা হচ্ছে। তা ছাড়া ড্রেনগুলোও পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছি এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে আগামি কাল (রোববার ২০ আগষ্ট) আমাদের নিয়মিত সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ওয়ার্ড ভিত্তিক ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেবো। আমাদের পৌরসভার ডাম্পিং সেন্টার নির্মানে ৯ কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়েছে। টেন্ডারও হয়েছে, খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। এরই মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠা কুমিল্লা সিলেট হাইওয়ে সড়কের পাশের ময়লার ভাগারগুলোর আবর্জনা পুড়িয়ে এবং মশক নিধন ঔষধ এবং ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেয়া হবে।