নেকবর হোসেন :
কুমিল্লায় হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জেলা শহরে একাধিক স্থানে মিলেছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি। এ অবস্থায় জেলা জুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত শিশুদের নিয়ে আতঙ্কে আছেন অভিভাবকরা।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুর ও রাজধানী ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, কুমিল্লা নগরীর জাঙ্গালিয়া ও শাসনগাছা বাস টার্মিনালে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সচেতন না হলে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।
সিনিয়র চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুল ইসলাম মজুমদার বলেন,আমরা যদি একটু সচেতন হই এবং এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করি তবে দ্রুতই ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। মশার লার্ভা সাধারণত স্থায়ী পানিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
বাসার বারান্দায় রাখা গাছের টব, প্লাস্টিকের ব্যাগ, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ারে পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না।’
মুরাদনগর রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সেফালি বেগম বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাই ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার ১১ বছর বয়সী ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ঘরের অন্য কোনো সদস্য আক্রান্ত হয়নি। যে বাসায় বেড়াতে গিয়েছি সিই পরিবারেরও কোনো সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত নয়। অথচ কীভাবে যেন আমার ছেলেটা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন,জেলার জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল ও শাসনগাছা বাস টার্মিনালে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে তারা এটি অন্য কোথাও থেকে বহন করে এনেছেন। নিজ বাড়িতে আক্রান্ত হননি।’
ডেঙ্গু আক্রান্ত চাঁদপুরের মোহন আলী চিকিৎসা নিচ্ছেন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তিনি জানান, গত তিন মাসে নিজ জেলার বাইরে তিনি কোথাও যাননি। প্রায় দুই সপ্তাহ জ্বর থাকার পর জানতে পেরেছেন তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত।
কোথায়,কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন- এমন প্রশ্নে মোহন আলী বলেন,সেটা জানি না। নিজ বাড়ি আর মাছের খামারে ছিলাম। কোথাও বেড়াতে যাইনি।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন,সিটির ২৭ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসে মশক নিধনের ফগার মেশিন আছে। একটি করে স্প্রে মেশিন দিয়েছি। মশা নিধনে সর্বত্র রাসায়নিক ছিটানো হয়েছে।
‘দুটি বাস টার্মিনালেই মশার লার্ভা ধ্বংসে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে নির্দেশনা দেয়া আছে। আমাদের লোকজন কাজ করছে। নাগরিকরা নিজেদের বাসাবাড়ি যদি পরিষ্কার রাখে এবং কোথাও পানি জমতে না দেয় তাহলে দ্রুতই ডেঙ্গু থেকে আমরা রেহাই পাবো।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, নতুন আক্রান্ত হয়ে গতকাল (সোমবার) ভর্তি হয়েছেন ৯ জন। সব মিলিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন,কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। একজন আছেন চাঁদপুরের। তাদের বিশেষায়িত কক্ষে মশারির নিচে রাখা হয়েছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্সের তত্ত্বাবধানে তারা সেবা পাচ্ছেন।
এছাড়াও পুরুষ রোগীদের জন্য ১৬ শয্যা, নারী রোগীদের জন্য ১৬ শয্যার ডেঙ্গু কর্নার প্রস্তুত রেখেছি। গত এক বছরে আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি।
আজিজুর রহমান আরও বলেন, ডেঙ্গুর লক্ষণে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আগে সবাই বলতো এডিস মশা দিনে দংশন করে। এটা ঠিক নয়। এই মশা এখন দিন-রাতে সব সময়ই দংশন করে। তাই বাসাবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি মশা যেন কামড়াতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।