শফিউল আলম রাজীব :
কামারশালাগুলোতে টুং টাং শব্দেই যেন জানান দিচ্ছে সামনে আসছে ঈদুল আজহা। কুরবানির পশু জবাই ও মাংস সাইজ করতে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ এবং প্রস্তুত রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত। আর এর উপকরণ তৈরি ও শান বা লবণ-পানি দেয়ার কাজে প্রয়োজন কামারদের। পশু কুরবানির দা, ছুরি ও চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে কামারপাড়ায় ছুটছে মানুষ। আবার কেউ কেউ পুরনো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানান কর্মকাররা। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠে এ শিল্প। শান দেয়া নতুন দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। ভেতরে চলছে কাজ। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখেমুখে প্রচণ্ড ক্লান্তির ছাপ। তবু থেমে নেই তারা । প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কাজের ব্যস্ততা।
দেবীদ্বার পৌর এলাকার ফতেহাবাদ, গ্রামের সমির কর্মকার জানান, ঈদের মাত্র দুদিন বাকি, তাই এখন অনেক ব্যাস্ততা। বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। কিন্তু কুরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। দিন-রাত কাজ করেও অবসর পাওয়া যায় না।
লক্ষন কর্মকার বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৫-১৬ বছর যাবৎ এই কাজ করছি। ঈদকে সামনে রেখে পাইকারি দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এ সময়ে আমাদের কদর বেশ ভালোই থাকে।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেবীদ্বার উপজেলার কামার দোকানগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছে কর্মকাররা। এ উপজেলায় ১টি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। পৌর এলাকার পুরান বাজার, ফতেহাবাদ, পোনরা ও বারেরা বাজারসহ ইউনিয়নগুলির বড় প্রতিটি বাজারেই আছে কামারের দোকান। তবে উপজেলার মধ্যে একমাত্র ফতেহাবাদেই আছে প্রায় দশটি কামারশালার একটি কামার পল্লী। কুরবানির ঈদ সামনে রেখে সেখানে লোহা আর হাতুড়ির শব্দে এখন আকাশ-বাতাস মুখরিত।
কারিগররা জানান, কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় এসব ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা- ছুরির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। ঈদ এলেই বেচা-বিক্রির ধুম পরে যায় কামারশালাগুলোতে।