মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মাছ শিকার প্রতিযোগিতার নামে অবৈধভাবে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথদীঘির পানি আটকে রাখার প্রতিবাদে ও ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত সমাধীস্থল এবং শতবছরের পুরনো দীঘির পাড়স্থ ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় কবরস্থান রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে যৌক্তিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনায় মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সকালে উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের জগন্নাথদীঘির পাড় এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের পাশের শাহী জামে মসজিদ সংলগ্ন স্থানে এ উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে এলাকাবাসীর পক্ষে বিভিন্ন দাবি পেশ করে বক্তব্য রাখেন, জগন্নাথদীঘি শাহী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীন, বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহজাহান, মেধাবী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসাইন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঐহিত্যবাহী জগন্নাথদীঘির বর্তমান ইজারাদার মাছ শিকার প্রতিযোগিতার নামে অসৎ উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ দীঘির পানি আটকে রেখেছেন। এতে আশেপাশের গ্রামের সাধারণ মানুষের বাড়ী, শতবছরের পুরনো কবরস্থান সহ স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত সমাধী ভেঙ্গে ধীরে ধীরে দীঘির গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা এ বিষয়ে আপত্তি জানালেও ইজারাদার সহ কর্তৃপক্ষ এতে কর্ণপাত করছে না। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ দীঘিটি সরকারি হলেও এটি স্থানীয়দের আবেগ-অনুভ‚তি। এখানে অত্র এলাকার প্রায় ১০-১২টি গ্রামের মানুষের পূর্ব পুরুষদের কবর রয়েছে। এখনো প্রায় সকল গ্রামের মানুষকে এখানকার কবরস্থানেই দাফন করা হয়। অনেক বেওয়ারিশ লাশের কবরও রয়েছে এখানে। দীঘির পানি এখন বিপদ সীমার উপরে রয়েছে। যারফলে প্রায় প্রতিদিনই দীঘির আশেপাশে বসবাসকারী অনেক সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শতবর্ষী কবরস্থানটিও দিন দিন ভেঙ্গে ছোট হয়ে যাচ্ছে। পুরনো অনেক কবর ভেঙ্গে ইতিমধ্যে দীঘিতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বাপ-দাদাদের কবরের শেষ স্মৃতিটুকুও মুছে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি নতুন কবর ভেঙ্গে লাশ দীঘিতে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো। পরে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সেটি মেরামত করেছে। দীঘির ইজারাদারকে বারবার বলা হলেও তারা এ ব্যাপারে উদাসীন। তারা মাছ শিকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বেশি মুনাফার আশায় আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অনতিবিলম্বে অবৈধভাবে আটকে রাখা জগন্নাথদীঘির পানি ছেড়ে দিয়ে এলাকাবাসীর ঘরবাড়ি ভাঙ্গন রোধ সহ শতবর্ষী কবরস্থানটি রক্ষা করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই চৌদ্দগ্রাম উপজেলার প্রশাসনের কর্ণধার ইউএনও মহোদয় এ ব্যাপারটি নিয়ে সুদৃষ্টি দিবেন। আশা করছি, শীঘ্রই তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক সমাধীস্থল ও ঐতিহ্যবাহী কবরস্থান রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। অন্যত্থায় আমরা এলাকাবাসীকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. কোরবান আলী, মো. কালা মিয়া, মো. শাহআলম, মোখন মিয়া, দ্বীন মোহাম্মদ দীলু, জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রবাসী মো. আজহারুল ইসলাম মুন্না, মো. সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ শিপন, যুবনেতা মোহাম্মদ রনি, মোহাম্মদ সাইমন, মো. শান্ত, মো. তৌহিদুল ইসলাম, মো. বেলাল হোসেন, মো. শিপন আলী, মো. আসিফ, মো. মহিন উদ্দিন, মো. অমিত, মো. ইসমাইল সহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের সচেতন নারী-পুরুষ সহ অন্তত কয়েকশত সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে চিওড়া মৎস চাষী সমবায় সমিতির সভাপতি ও দীঘির ইজারাদার প্রতিনিধি মো. ফখরুল ইসলাম ফয়সাল বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দীঘির মাছ সহ মৎস্য সামগ্রী ও বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। আমরা মাত্র কয়েকমাস পূর্বেই দীঘিটি লিজ নিয়েছি। দীঘির পাড় ভেঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সমাধী ও কবরস্থান আগে থেকেই বিলীন হয়ে আসছিল। আমি চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কবরস্থানটির যথাযথ সংস্কার করুক। পানি আটকে রেখে বড়শি প্রতিযোগিতার আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাছ শিকারীদের বড়শি ফেলার সুবিধার্থে সাময়িকভাকে দীঘির পানি আটকে রাখা হয়েছে। প্রতিযোগিতা শেষে পানি ছেড়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি ওয়াকিবহাল নই। সাংবাদিকদের মাধ্যমে এইমাত্র বিষয়টি জেনেছি। স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ দিলে মুক্তিযোদ্ধা সমাধী ও কবরস্থান রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’