গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির:
(ঢাকায় মহাসমাবেশে জনতার ঢল; ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণাসহ ছয় দফা এবং ভারতে মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবি)
২৬ এপ্রিল , শনিবার ঢাকায় ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারণ , নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ,
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ পাশাপাশি দেশের লক্ষ লক্ষ তরিকতপন্থী, সুন্নি – সূফী ঘরণার জনতার ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশটি মূলত জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। যা এদেশের সুন্নি জাগরণের নব অধ্যায় সূচনা করেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নগর-শহর এমনকি গ্রামীণ জনপদেও এ ধরনের প্রতিবাদ-সংহতি অনুষ্ঠান পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ সুন্নি জনতার এমন স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং অন্যদিকে ইসরাইলের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ প্রকৃত অর্থেই অসাধারণ। উক্ত সমাবেশে পাঠকৃত ছয় দফা সংবলিত ঘোষণাপত্রে ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সব চুক্তি বাতিলের দাবিসহ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং মুসলিম বিশ্বকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের জোরালো আহ্বান জানানো হয় এবং ইসরাইলের সকল পণ্য ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধের দাবি করা হয়েছে।বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই বিক্ষোভের নানা দিক গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে।বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচির জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ‘আরব বিশ্বসহ অন্য মুসলিম দেশগুলো যা পারেনি, বাংলাদেশ তা আবারো দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সংহতি ও সহমর্মিতা সম্পর্কে ফিলিস্তিনের জনগণকে জানানো হবে ফিলিস্তিনের টিভির মাধ্যমে।
পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি ও রাষ্ট্রে কয়েকশ’ গণহত্যা হলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ধরনের উদ্যোগ প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের কাছে উচুমার্গে ইতিবাচক কর্তব্যরূপে স্বীকৃত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ফিলিস্তিনের বিষয়ে চরম নিকৃষ্টতম পর্যায়ে মানবাধিকার নিষ্পিষ্ট হলেও কারো পক্ষ থেকে কোনো উচ্চবাচ্য উত্থাপিত হয়নি। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, মুসলিম দেশসমূহের প্রধানরাও অজানা কারণে প্রায় নিশ্চুপ। গণমাধ্যমের বদৌলতে যেসব দৃশ্যপট প্রতিনিয়ত বিশ্ববাসী পর্যবেক্ষণ করছে, তাতে ফিলিস্তিনিদের সভ্যতা বিধ্বংসী এবং মানুষ হত্যার বিকৃত মানসিকতার দৃষ্টি ভঙ্গিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। পুরো গাজা-রাফা পশ্চিমতীরসহ অন্য অঞ্চলে এমন ধ্বংসযজ্ঞ স্মরণকালের বিশ্বে কোথাও হয়েছে কিনা তা ভাবার বিষয়। মৃত-গলিত লাশের স্তূপের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের আহাজারি সত্যিই এতই হৃদয়বিদারক যা ভাষায় প্রকাশ দুরূহ। এমন কর্মযজ্ঞ সংঘটিত করার জন্য ন্যূনতম অনুশোচনা ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে লক্ষণীয় নয়। বরং যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেও গণহত্যা পরিচালনার কদর্য অপতৎপরতা অধিকতর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসরায়েলের নৃশংস ও অমানবীয় কর্মকাণ্ডে গাজা পরিস্থিতি কঠিন থেকে কঠিনতর রূপে পরিণত হচ্ছে।
১৯৪৮ সাল থেকে নির্যাতিত-নিপীড়িত ফিলিস্তিনিরা যুগের পর যুগ চরম অবিচারের সম্মুখীন। দেশ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়নের মাধ্যমে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল যে দখলদারিত্ব শুরু করেছিল; তা রোধে আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। ধারাবাহিক এ সংঘাতে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির সঠিক পরিসংখ্যান বের করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য । একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এ সমস্যার একমাত্র ন্যায়সংগত সমাধান হলেও; ইহুদী ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষার্থে বা পক্ষপাততুষ্ট আচরণের কারণে কিংবা নতুন নতুন সংকটে এ বিষয়ে তথাকথিত উন্নত-ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের নানা রকম উদ্যোগ-প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যর্থই হয়েছে। জাতিসংঘ বা মুসলিম বিশ্বের ২২ সদস্যের আরব লিগও কোনো অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বিগত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শান্তি আলোচনা চলছে ধীরে ধীরে। স্বাধীনতার প্রশ্নে পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকলেও কথিত পরাশক্তি হিসেবে খ্যাত কতিপয় রাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থন ইসরায়েলকে আরো বেশিমাত্রায় বেপরোয়া করেছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
আমাদের সবার জানা, গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ ফিলিস্তিনের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘকাল ধরে পরিচালিত যুদ্ধের অংশ হিসেবে হামাসের ইসরায়েল আক্রমণকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরে নৃশংসতম হত্যা-গণহত্যার দৃশ্যাদৃশ্য সুস্পষ্ট। বিশ্বের কতিপয় ক্ষমতাধর কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র নায়কের আর্থিক ও আধুনিক সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখে নারকীয় তাণ্ডবের নজিরবিহীন দৃশ্যপট তৈরি করে চলছে। পশুতুল্য দানবদের সার্বিক সহযোগিতায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনে শুধু গণহত্যা পরিচালনা করেনি; নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহে বাধা প্রদান করে নির্মম মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যার শিকারে পরিণত শিশু-নারীসহ প্রায় ৬০ হাজারের কথা বলা হলেও অনেকের মতে তা লক্ষাধিক। পরাক্রমশীল রাষ্ট্রগুরোর প্রত্যক্ষ মদদ অবাক বিস্ময়ে পুরোবিশ্ব অবলোকন করছে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ইসরাইল সরকার ও হামাসের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি সম্পাদনের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ১৫ মাস ত্রাণসামগ্রী বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশ করতে পারেনি। প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকার ৩৭ শতাংশের মজুদ নেই। চিকিৎসা সরবরাহের ৫৯ শতাংশই মজুদ শূন্য । গণমাধ্যমে প্রকাশিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মতে, হাসপাতালগুলোতে ওষুধের মজুদ বিপজ্জনক ও নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি হামলায় আহতদের চিকিৎসা প্রদান প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন গাজার চিকিৎসকরা।
বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই গাজাবাসীদের মাঝে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আনন্দে বাধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছিল। মিষ্টি বিতরণ, পটকা ফুটানোসহ নানা উল্লাসে তারা মেতে ওঠেছিল। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপেই হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তার বিনিময়ে ইসরায়েল ছেড়ে দেবে তাদের জেলে আটক কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে। একই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ছাড়তে হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পাবে বাড়ি ফেরার অনুমতি। পাশাপাশি প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে গাজায় ঢোকারও সুযোগ দেবে ইসরায়েল। চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে। তৃতীয় ও শেষ ধাপে হবে গাজার পুনর্গঠন যা শেষ হতে লাগবে কয়েক বছর। গাজার ভেতর ৮০০ মিটারের একটি বাফার জোন তৈরি করা হবে যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরায়েলের হাতে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েল ও হামাস চার ধাপে বন্দিবিনিময় করে। এরই মধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ১৮ জিম্মি ও কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে। কিন্তু গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারে মতবিরোধ, বন্দিবিনিময় ও জিম্মিদের পরিস্থিতি, কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা, মানবিক সহায়তা বন্ধ করাসহ বিভিন্ন কারণে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়। যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধ ও নির্বিচার হামলায় গাজা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। নতুন হামলা শুরুর পর থেকে মৃত্যু তালিকায় যুক্ত হয়েছে প্রায় দুই হাজার জনেরও বেশি ফিলিস্তিনির নাম।
বোমা হামলায় ক্ষতবিক্ষত ফিলিস্তিনিদের তীব্র খাদ্য সংকট মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে প্রতিভাত। ছয় সপ্তাহের বেশি সময় বন্ধ রাখা হয়েছে গাজা উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার জন্য সব ধরনের সরবরাহ। চেক পয়েন্টগুলো বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারছে না ত্রাণবাহী ট্রাক। অবিলম্বে চেক পয়েন্টগুলো খোলা না হলে অধিকাংশ গাজাবাসীর ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যুবরণের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বিবৃতি মারফত জানা যায়, অবরুদ্ধ ছিটমহলে ভয়াবহ মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে এসেছে। ইসরাইল ৯০ শতাংশেরও বেশি পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করেছে। ফলে, গাজার ৭০ শতাংশ পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার এমন অমানবিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পৃথিবীর দোজখে পরিণত হয়েছে গাজা, যেখানে মানুষ বিদ্যুৎ-পানি ও খাবারের সংকটে রয়েছে। গাজায় সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। গাজার মানুষের জন্য রসদের অভাবে অস্থায়ী হাসপাতালগুলো আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ জাতিসংঘের ভাষ্য, ইসরাইলের সহিংস আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত এবং অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মতে, হাসপাতালগুলোতে ওষুধের মজুদ বিপজ্জনক ও নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি হামলায় আহতদের চিকিৎসা প্রদানে প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন গাজার চিকিৎসকরা। ত্রাণসামগ্রী বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশ করতে পারছে না। প্রয়োজনীয় ওষুধের
তালিকার ৩৭ শতাংশের মজুদ নেই। চিকিৎসা সরবরাহের ৫৯ শতাংশই মজুদ শূন্য। ৫৪ শতাংশ ক্যান্সার এবং রক্তের রোগের ওষুধ নেই। তাছাড়া ৮০ হাজার ডায়াবেটিক রোগী এবং ১ লাখ ১০ হাজার হাইপারটেনসিভ রোগীর যত্ন নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অ্যান্টিবায়োটিক এবং রক্তের ব্যাগের সরবরাহও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। অন্য মানবিক সংস্থাসমূহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট এ সংকট সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এটি সুস্পষ্ট যে, গাজায় নারকীয় তাণ্ডবের বিরুদ্ধে পুরোবিশ্ব ঐক্যবদ্ধ। জাতিসংঘের মানবিক যুদ্ধবিরতিসহ পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশেই প্রতিদিনই বিশাল জনসমাবেশ-র্যালির মাধ্যমে ইসরাইল ও সহযোগী কর্তৃত্ববাদীদের নির্মূলে জোরালো উচ্চারণ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ গাজায় গিয়ে ইসরায়েলি হায়েনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। বিভিন্ন মুসলিম দেশের সম্মিলিত উদ্যোগে এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে বিশ্বের সব মুসলমান সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণে আগ্রহী । একই সঙ্গে এটি বলতে হয় যে, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। তবে বিভিন্ন উপায়ে প্রত্যেকেই কমবেশি অর্থ সাহায্য দিয়ে সরকারকে অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে সেদেশে খাদ্য-পানি-ওষুধসহ অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী পাঠানো অনিবার্য। সম্প্রতি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে যেভাবে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিজস্ব যান ব্যবহার করে যে বিপুল পরিমাণ দ্রব্যাদি প্রেরণ করা হয়েছে, একই উপায়ে ফিলিস্তিনেও ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
ম্যাস গ্যাদারিং ফর প্যালেস্টাইন’ সমাবেশটি মূলত আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত তথা সুন্নি ও তরিকতপন্থী ঘরণার জাতীয় রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে এবং বিভিন্ন দরবার,পীর মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম গণের সমন্বয়ে গঠিত “মুভমেন্ট ফর ফ্রী প্যালেস্টাইন” এর ব্যানারে আয়োজন করা হয়েছিল। ২৬ এপ্রিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এই মহাসমাবেশটি ঘিরে একটি মহল সরকারকে বিভ্রান্ত করে। যার ফলে সমাবেশের অনুমতি দিয়েও পরে বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে “আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ” ব্যানারে আয়োজন করা হয়। এখানেও তিন দফা স্থান পরিবর্তন করা হয়। প্রথমে সোহরাওয়ার্দী, তারপর গোলাপবাগ পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১০ টা থেকে ১২ টার মধ্যে শেষ করা সহ নানা শর্তে অনুমতি দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তিন দফা স্থান পরিবর্তন, অনুমতি দিতে তালবাহানা, সময় ক্ষেপন সহ একটি মহলের ষড়যন্ত্র, বিভ্রান্তির কঠোর সমালোচনা করা হয়।
সমাবেশে আসা অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সুন্নি জনতা শান্তি প্রিয়।আমরা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিশ্বাস করি না। এটাই কি আমাদের অপরাধ? তা না হলে ৮৫ % তরিকতপন্থী সুন্নি মুসলিম জনতা প্রায় ১২ হাজার দরবার,খানকা ও মাজারের কোটি কোটি ভক্ত,মুর্শিদ ও অনুসারিদের সমাবেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র কেন? আমরা তো ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষের পক্ষে এবং পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলাম।নানা বাধা, চক্রান্ত,বার বার স্থান পরিবর্তন করার পরও মিডিয়ার ভাষ্যমতে ৮ থেকে ১০ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে। উক্ত সমাবেশের অন্যতম নেতা উপাধ্যক্ষ মাওঃ আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, এদেশের তরিকতপন্থী, সুন্নি জনতা আজকে প্রমাণ করে দিয়েছে, কিভাবে নানা ষড়যন্ত্র, বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হতে পারে এবং শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ভাবে সমাবেশ করতে পারে। তিনি, ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের যেকোনো জাতীয়, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কর্মকাণ্ডে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এবং উপস্থিত লক্ষ লক্ষ জনতাকে বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সমাবেশকে সফল করা ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।