মুরাদনগর প্রতিনিধি:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডের জমির মাটি ও গাছ বিক্রিসহ এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডের উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জিয়াউল কবিরের বিরুদ্ধে। শিক্ষাজীবনে নিজেকে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি দাবী করে গত ১৭ বছরে বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের দিতেন হুমকি। কোন কর্মকর্তা কর্মচারী তার কথা না শুনলেই করতেন নানাভাবে হয়রানি। এ নিয়ে ফিল্ডে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।
জানা যায়, ২০০৮ সালে জিয়াউল কবির উপজেলার বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে উপ-ব্যবস্থাপক পদে যোগদান করেন। ১৭ বছর ধরে তিনি একই সাথে কর্মরত রয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে তিনি উপ-মহা ব্যবস্থাপক পদে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর সবুরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিতেন তিনি। আওয়ামী সরকারের আমলে সচিব ও আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের সাথে ছিলেন তার উঠাবসা। জিয়াউল কবিরের ব্যাক্তিগত ফেসবুক আইডিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু, ফ্যাসিস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সমর্থনে একাধিক পোস্ট ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার সাথে একাধিক ছবি।
সম্প্রতি বাখরাবাদ গ্যাসফিল্ডের প্রবেশ পথসহ প্রায় ২’শ ৪০মিটার সড়ক ও আংশিক ড্রেন নির্মানে ৫১ লাখ টাকা ব্যায়ে চলছে নির্মান কাজ। সেই সড়কটির বক্স খনন করার পর উত্তেলিত মাটি (প্রায় ১শ’ ট্র্যাক্টর) সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন বল্লবদী গ্রামের জুলহাস মিয়ার পুত্র মুকবল হোসেনের কাছে বিক্রি করে দেয় গ্যাসফিল্ডের ডিজিএম জিয়াউল কবির। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নির্মিত এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপনে খননকৃত মাটি একই সময়ে গ্যাসফিল্ডের ভেতরে পুকুরে প্যালাসাইডিং দেয়াল নির্মান কাজের ঠিকাদার হুুমায়ন কবিরের কাছে বিক্রি করে দেন। একই সময়ে জিয়াউল কবিরের নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাখরাবাদ গ্যাসফিল্ডের নামে থাকা উপজেলার আলীরচর গ্রামের গোমতী নদী সংলগ্ন ৩৬ একর জমির মাটি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। একই সময়ে গ্যাস ফিল্ডের সামনের সড়ক নির্মাণের নামে সড়কের দু’পাশে থাকা ৫০ বছরের অধিক পুড়নো প্রায় ১২টি কড়ই গাছ কেটে বিক্রি করারও অভিযোগ উঠলে গাছের আলামত নষ্ট করার জন্য ক্রেনের সাহায্যে গাছের গোড়াগুলোকে উপড়ে ফেলা হয়।
ডিজিএম জিয়াউল কবির প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব কাজ করে আসছেন। এছাড়াও জিয়াউল কবির বিভিন্ন অনিয়ম করতে গড়ে তুলেছেন গ্যাসফিল্ডের ভেতরে একাধিক সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বাখরাবাদ গ্যাসফিল্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, জিয়াউল কবির টাকার জন্য সব করতে পারেন। এখানে তার অনিয়মের কেহ প্রতিবাদ করতে পারে না, অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই তাকে হয়রানি করা হয়। এছাড়া জিয়াউল কবির তার নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনিয়ম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তিনি নির্দিষ্ট সময়ে অফিস করেন না। সে বাংলোতে থাকেন সেখানেই অফিসের কাজগুলো করেন। রাতের বেলায় অফিসে এসে তার নিজস্ব কর্মকর্তাদের সাথে চায়ের আড্ডায় মাতেন। জিয়াউল কবির দিনের বেলায় ভুলক্রমে অফিসে আসলেও বেলা ৩টার আগে অফিসে আসেন না।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলার বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির উপ-মহা ব্যবস্থাপক জিয়াউল কবির সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওই কুচক্রী মহল এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।