মোঃ রেজাউল হক শাকিল, ব্রাহ্মণপাড়াঃ
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম(৯৫)। মঙ্গলবার রাতের প্রতিদিনের মত খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ঠিক সাড়ে ১০ টার দিকে কে যেন তার দরজায় কড়া নাড়ছে। ভয়ে সে অনেকটায় জড়সড়। রাতে কেউ তাকে এভাবে ডাকার কথা নয়। সে পঙ্গু স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারে না। তারপরও শীতের রাতে অনেকটায় আতঙ্ক নিয়ে বিছানা থেকে ডাকের উত্তর দিল। কে ডা! দেখতে পায় তার চোখের সামনে গায়ে সোট জড়িয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।
হাতে রয়েছে কম্বল। সে প্রথমে চিনতে পারেনি। টানা টানা কন্ঠে বলে উঠলো কেডায় আপনারা।
সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলে উঠলেন আমি আপনাদের উপজেলার ইউএনও। আপনি রাতে শীতে কষ্ট করেন তাই আপনাকে শীতের কম্বল দিতে আসলাম। এর পরেই ফাতেমা বেগমের গায়ে একটি কম্বল দেন ইউএনও। কম্বল পেয়ে চোখে পানি চলে আসে ফাতেমা বেগমের। এমন ভাবে ইউএনও তার বাড়িতে আসবে কখনো ভাবিনি সে। হঠাৎ ইউএনও কে বাসায় পেয়ে বলছিলেন তার কষ্টের কথা।
শুধু ফাতেমা বেগমই নয়, শত বর্ষ বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন তুলসী রাণী, জাকির হোসেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী করিম ও ভিক্ষুকসহ আরও অনেক অসহায় ব্যাক্তিদের খোঁজে বের করে শীতের কম্বল দিচ্ছেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা জাহান।
এছাড়া গাড়িতে করে যেতে যেতে রাস্তায় চলাফেরা করা পাগল দেখলেও সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে তাদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। এতে করে পাগলেরাও খুশি হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
প্রচন্ড শীতের মধ্যে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া কম্বল সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা জাহান বাড়িতে গিয়ে নিজের হাতে কম্বল গায়ে জড়িয়ে দেন শীতার্তদের। রাস্তার পাশে, প্রত্যন্ত গ্রামের প্রকৃত অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের খুঁজে খুঁজে কম্বল দেন তিনি। এ সময় তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন। এবং যাদের বেশি প্রয়োজন এমন গরিব দুস্থদের হাতে কম্বল তুলে দেন তিনি। তীব্র শীতের মধ্যে কখনও এসব গ্রামে হেঁটে যান আবার কিছুদূর গাড়িতে যান ইউএনও। কম্বল পেয়ে ফাতেমা বেগম বলেন, এই শীতে কেউ কোনো খোঁজ না নিলেও ইউএনও নিজে এসে কম্বল দিয়েছেন। কম্বল পেয়ে আমি অনেক খুশি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা জাহান বলেন, রাতে ব্রাহ্মণপাড়া, সাহেবাবাদ, জিরুইন, অলুয়া, চন্ডিপুর, আসাদনগর
রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পাগলসহ অসহায় ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে কম্বল দিয়েছি। তখন একজন অসুস্থ ব্যক্তির কথা শুনতে পাই। তখন তার বাড়ি গিয়ে সার্বিক খোঁজ খবর নেই। উনি অনেক অসহায়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে কম্বল দেয়া হয়। ভবিষ্যতে যেকোন সমস্যায় উপজেলা প্রশাসন পঙ্গু ফাতেমা বেগমের পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।