কুবি প্রতিনিধি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ২৯ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে রাকেশ দাস ও এস কে মাসুমকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. হান্নার রহিম ও ম. আবিরের নেতৃত্বে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
আটককৃত শিক্ষার্থী রাকেশ দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ছিলেন।
শেখ মাসুমও একই ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের উপ প্রচার সম্পাদক। তাঁরা দুইজনই ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা ই এলাহীর অনুসারী ছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রথমে ক্যাম্পাসের পাশে থাকা একটি খাবার হোটেলের সামনে থেকে রাকেশকে আটক করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় কোটবাড়ি পুলিশ পাড়ির সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে গ্রেফতার করে নিয়ে যান।
অন্যদিকে শেখ মাসুমকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার পর আটক করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ এসে বেলা সাড়ে ৪টার দিকে আটক করে তাকেও নিয়ে যান।
তাদের আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস এম আরিফুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা মামলার আসামি হিসেবে আমাদের কাছে দিয়েছে দুই জনকে। আমরা ডিবি অফিসে হস্তান্তর করেছি।
কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ করিম খান বলেন, আটককৃত ব্যক্তিদের নামে মামলা রয়েছে। তাই আমরা তাদেরকে আটক করেছি। আমরা তাদেরকে কোর্টে চালান করে দিব।
শিক্ষার্থী আটকের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: আবদুল হাকিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে আমি দুই বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি । এরপর আমি প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছি। প্রশাসন বলেছে ওদের নামে মামলা আছে। কোর্টে চালান করার পর আইনগতভাবে ওদেরকে ছাড়িয়ে আনতে হবে।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় আটককৃত দুই শিক্ষার্থীসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মো. সাখাওয়াত হোসেন একটি মামলা দায়ের করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, চার শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
মামলায় সাক্ষী হিসেবে হিসেবে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের কয়েকজন দাবি করেছেন, মামলার বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। এছাড়াও, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা ঘটনার বিবরণ নিয়ে সেসময় বিতর্ক উঠে।
পরে মামলার বাদী মো. সাখাওয়াত হোসেন গত এক অক্টোবর কুমিল্লা জেলা নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে মামলা প্রত্যাহার চেয়ে একটি হলফনামা জমা দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মোকদ্দমাটি দায়ের কালীন সময়ে মোকদ্দমায় উল্লিখিত ঘটনার সহিত জড়িত প্রকৃত আসামিদের সহিত জ্ঞাত না থাকার কারণে আমি সূত্রক্ত বিবাদীগণকে মামলায় শ্রেণীবদ্ধ করি। পরবর্তীতে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আমি নিশ্চিত হয়েছি বিবাদীগণ ঘটনার সাথে জড়িত নেন। বিবাদীগণ মোকদ্দমার দায় হতে অব্যাহতি কিংবা খালাস পেলে আমার (সাখাওয়াত হোসেন) কোনো আপত্তি নেই।