মো. মোশাররফ হোসেন মনির, মুরাদনগর, কুমিল্লা ।।
কনকনে শীত বা তাপদাহ গরমে বা বৃষ্টিতেও দীর্ঘদিন ধরে শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটে খোলা আকাশের নিচে চলছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় পুস্করিনীরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। আর এতে করে চরম ভাবে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতি বছর স্কুলের পড়া লেখার সাফল্যে সুনাম অর্জন করায় প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধিহলেও বৃদ্ধি হচ্ছেনা স্কুলের কাঠামোগত উন্নয়ন এমন দাবী স্কুলের শিক্ষক, অভিবাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর। এছাড়াও শিক্ষক সঙ্কটসহ ও নৈশ প্রহরী না থাকায় শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হলে, ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। প্রর্যায়ক্রমে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিহলে সরকার ২০৫-২০০৬ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবনটি নির্মান করা হয়। বর্তমানে ভবনটির একটি কক্ষে অফিস অপর কক্ষটিতে শিশু শ্রেণির ক্লাস চলমান রয়েছে। এই ভবনটিও বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে । এমন অবস্থা স্কুলটিতে শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে স্থানীয় বাসিন্দারা ২০২২ সালে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনের ঘর নির্মান করে দেয়। এরপরও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট থাকায় খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে চরম দূর্ভোগের শিকার হয়ে চলছে ২৫০ জন শিক্ষার্থীর খোলা আকাশের নিচে পাঠদান। অপর দিকে দির্ঘদিন থেকে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। স্কুলটিতে ৭টি পদের বিপরীতে রয়েছে ৫ জন শিক্ষক। নেই কোন নৈশ প্রহরী।
চতুর্থ শ্রেণির সুমা ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তারেকসহ অনেক শিক্ষার্থী নতুন ভবনের দাবি জানিয়ে বলেন, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়ে প্রখর রোদে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে এবং বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে অনেক দিন আমরা ক্লাস করতে পারিনা। আমরা শ্রেনি কক্ষ সঙ্কট থেকে পরিত্রানের জন্য সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ সেলিম সরকার জানান, আমি সভাপতি থাকা অবস্থ্যায় একটি পুরাতন ভবন ছিলো। ভবনটি জরাজীর্ণ থাকায় ২০২২ সালে ওই ভবনটি নিলামের মাধ্যেমে ভেঙ্গে ফেলা হয়। এতে করে স্কুলটি চরম শ্রেনিকক্ষ সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরী হয়। পরে আমি স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি টিনের ঘর নির্মাণ করি। এতেও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট শেষ না হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে বাধ্য হই।
পুস্করিনীরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তামান্না আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এরপরও কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক জানান, নতুন ভবনের ব্যাপারে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। আশাকরি শীঘ্রই নতুন ভবনের বরাদ্ধ পাওয়া যাবে। তাতে দ্রুত ভবন সংকটের এই সমস্যা সমাধান হবে। প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে ও সহকারি শিক্ষকের শূণ্য পদ গুলো খুব শিঘ্রই পূরণ করা হবে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম বলেন,কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার চাপিতলা ইউনিয়নের ৫৭নং পুস্করিনীরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন না থাকার দরুন শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রতি বছর কোন কোন উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নেই উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমাদেরকে অবহিত করেন। সরকার থেকে আমরা বরাদ্ধ পেলে তা উপজেলার শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে থাকি। আপনার মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি আমি জেনেছি আমি মুরাদনগর উপজেলার শিক্ষা অফিসারের আজই সাথে কথা বলব।