মোঃ রেজাউল হক শাকিল, ব্রাহ্মণপাড়া ( কুমিল্লা ) প্রতিনিধি
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাচা পদ্ধতি ব্যবহার করে পতিত জমিতে শীতকালীন সবজি বিষমুক্ত লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন প্রান্তিক কৃষক আবদুল মান্নান তনু। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর তিনি লাউয়ের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। শীতকালীন সবজি হিসেবে বাজারে লাউয়ের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় লাভবানও হচ্ছেন তিনি।
কৃষক আবদুল মান্নান তনু ( ৪৫ ) উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের গোপালনগর এলাকার মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি তাঁর বাড়ির পাশের ৬০ শতাংশ পতিত জমিতে এই লাউয়ের আবাদ করেছেন। এ মৌসুমে লাউয়ের আশানুরূপ ফলনে খুশি কৃষক তনু।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, লাউয়ের বীজ বপনের সপ্তাখানেকের মধ্যেই চারা গজায়। ছয় সপ্তাহের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল দেখা দেয়। উত্তম পরিচর্যার মাধ্যমে দুই মাসের মধ্যেই লাউ বাজারজাত করা যায়। লাউ চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পরিশ্রম ও খরচ কম লাগে। সারাবছরই বাজারে লাউয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এতে কৃষকরা লাভবান হয়। তাই লাউ চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাচায় ঝুলছে ছোট-বড় প্রায় হাজার খানেক লাউ। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে অসংখ্য লাউয়ের কড়া। এসব লাউ ও লাউয়ের কড়ায় যেন কৃষক তনুর স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। বাঁশের খুঁটি, জি আই তার ও জাল দিয়ে তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে মাচা পদ্ধতিতে লাউ আবাদ করেছেন। পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যাবসায়ীরা জমিতে এসে লাউ সংগ্রহ করছেন। লাউয়ের ভালো ফলনে ও অধিক লাভের ফলে স্বপ্ন পূরণে খুশি কৃষক আবদুল মান্নান তনু।
কৃষক আবদুল মান্নান তনু বলেন, বাড়ির পাশের ৬০ শতাংশ জমিতে আমি লাউ চাষ করেছি। তবে এ বছর প্রথমে ভয়াবহ বন্যায়, তারপর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পর পর দুইবার আমার লাউ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। পরে আমি আবারও লাউ চাষ করি। তারপর কোনরকম দুর্যোগের মুখে না পড়ায় আমি সফল হয়েছি। এবার আমার জমিতে অসংখ্য লাউ ধরেছে। এ পর্যন্ত আমি জমি থেকে অনেক লাউ সংগ্রহ করে বিক্রি করেছি, এবং এখনো বিক্রি করছি। প্রথম দিকে জমি থেকে প্রতিদিন দুইবার করে লাউ সংগ্রহ করেছি। প্রতিবার একশো করে লাউ সংগ্রহ করে পাইকারদের দিতে পেরেছি। এখনো প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ টি লাউ সংগ্রহ করে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ছোট-বড় প্রতি পিস লাউ গড়ে আমি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে আমার দুইবার ফসল নষ্ট হওয়ার লোকসান পুষিয়ে ও তৃতীয়বার লাউ আবাদের খরচ উঠে আমি অনেক লাভবান হচ্ছি। দুইবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও যে স্বপ্ন নিয়ে আমি তৃতীয়বার লাউ আবাদ করেছি সে স্বপ্ন আমার পূরণ হয়েছে।
লাউ কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি প্রায় প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে লাউ নিতে কৃষক তনু ভাইয়ের জমিতে আসি। আমি ছাড়াও আরও পাইকার লাউ নিতে এখানে আসেন। এ বছর তনু ভাইয়ের জমিতে লাউয়ের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারেও লাউয়ের চাহিদা আছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, লাউ মূলত শীতকালীন সবজি হলেও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় এখন সারা বছরই লাউ চাষ হয়। তবে লাউ চাষ বেশ লাভজনক। লাউ চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি বলেন, উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের গোপালনগর এলাকার কৃষক আবদুল মান্নান তনুর লাউ ক্ষেত আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। এ বছর তাঁর লাউ ক্ষেতে বাম্পার ফলন হয়েছে। তাঁর এ সাফল্যে অন্যান্য কৃষকরাও অনুপ্রাণিত হবে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ওই কৃষকের লাউ ক্ষেত সার্বিক তত্ত্বাবধানে রেখেছে।