মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
একটি পুকুর পাড়ের ঘাসে বসে আছেন এক ব্যক্তি। চোখেমুখে তার লেপ্টে আছে হতাশার চিহ্ন। তিনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন পুকুরের থইথই জলের দিকে।
বলছিলাম কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার মো. আতিকের কথা। তিনি উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা এলাকার বাসিন্দা। তিনি একজন মাছচাষি। এবারের প্রলয়ংকরী বন্যায় তাঁর ৬টি মাছভরা বড় পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তিনি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত একটি পুকুর পাড়ে বসেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে এ প্রতিনিধির। তিনি বলেন, 'সর্বনাশা বন্যা আমাকে পথে বসিয়ে গেছে। আমার মাছভর্তি পুকুরগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পুকুরের সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে আমার ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। আগে পুকুরগুলোর সামনে এলে মাছের নড়াচড়ায় সুখে বুকটা ভরে উঠতো। আর এখন পুকুরগুলোর পাড়ে এলে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। তবু বারবার পুকুরগুলোর কাছেই ছুটে আসি।'
মাছচাষি মো. আতিক বলেন, 'দিনে ও রাতে খেটেখুটে মাছগুলোকে বড় করে তুলেছিলাম। হয়তো আর মাস দেড়েকের মধ্যে মাছগুলো বিক্রি করতাম। এরইমধ্যে সর্বনাশা বন্যা এসে সব উলটপালট করে দিয়ে গেল। বন্যার জলের সঙ্গে আমার স্বপ্নও ভেসে গেছে। আমার এ ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে তুলবো জানি না। এই টেনশনে রাতেও ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। পুকুরগুলোর সঙ্গে সঙ্গে আমার জীবনযাত্রায়ও ধস এসেছে। এতবড় ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আদৌও সম্ভব হবে কি না জানি না।'
আতিক বলেন, 'এরকম ভয়ংকর বন্যার মুখোমুখি হবো কোনোদিন চিন্তাও করিনি। আমার পুকুরগুলোর মধ্যে ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের কাতল মাছসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ ছিল। বন্যার পানি বাড়তে শুরু করায় পুকুরগুলোর চারপাশে জাল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলাম, কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি, আমার পুকুরের মাছগুলো বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে আমি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।'
তিনি বলেন, 'ধারকর্জ ও ঋণ করে পুঁজি সংগ্রহ করেছিলাম। মাছের খাবার আনা দোকান মালিকও অনেক টাকা পাওনা। একদিকে দোকান মালিক ও ঋণের চাপ, আর পাওনাদারদের চাপ তো আছেই। ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও যেন নেই।'
আতিকের মতো এরকম চিত্র উপজেলার অধিকাংশ মৎস্য খামারির। বন্যার পানিতে পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা। উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, অসময়ের ভয়ংকর বন্যায় এ উপজেলার মাছভর্তি ৩ হাজারের বেশি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই দুর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিদের পাশে থেকে তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয় বণিক বলেন, 'আকস্মিক বন্যায় এ উপজেলায় ৩ হাজারের বেশি পুকুর, মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২ হাজার মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। আশা করছি ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা সরকারি সহযোগিতা পাবেন, তবে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে মাঠপর্যায়ের কাজ করছি।'