গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, বুড়িচং।।
কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে গত দুই-তিন হল। পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বিশেষত বন্যার পানিতে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে মাটি, টিনের বাড়িঘর এবং সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে।
উজান থেকে নামা গোমতী নদীর পাড় ভেঙে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুরিয়া দিয়ে ঢলে দেখা দিয়েছে বাড়িঘর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ভাঙনের চিত্র। এমন অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে গেছে এই এলাকায়। একই সঙ্গে কুমিল্লা - মীরপুর, কুমিল্লা -বাগড়া সড়কে দেখা যাচ্ছে ভাঙন। পানি নামার পর সড়কের ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠেছে।
বুড়িচংয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই উপজেলায় নদী ও খালগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমতে থাকলেও এখনো উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে আছে।
উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নের পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বিশেষত বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো এবং বাড়িগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মৎস্য ও কৃষিতেও বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে এই বন্যা।
উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে বুড়িচংয়ে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৮০ হাজার।
বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত প্রায় ১০০টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে দের হাজারের মত। বন্যায় ভেসে গিয়ে মৃতের সংখ্যা ৫জন। এ ছাড়া বন্যায় কয়েক হাজার ব্রয়লার এবং লেয়ার মুরগি মারা গেছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতিতে পিছিয়ে নেই বৈদ্যুতিক ক্ষয়ক্ষতিও। বেশ কিছু ট্রান্সফর্মার, বৈদ্যুতিক খুঁটি ১০০ মিটার তারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, ২৫০০০ হাজার 'মানুষ বিদ্যুৎবিহীন ছিল এই বন্যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমনের বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও পুকুরের মাছ। আমনের ৮০% বীজতলা পানির ভেতর নিমজ্জিত হয়েছে। ৫০ শতাংশ ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলায় আনুমানিক দুই হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আরও ধারণা পাওয়া যাবে। তবে বুড়িচংয়ে এই বন্যা লাখো মানুষের জীবনমান নিচে নামিয়ে দিয়েছে।
পালট্টি রাজাপুর গ্ৰামের বাসিন্দা পক্কু মিয়া (৬২)জানান, নিজের ঘর বাড়ি ফেলে অন্যজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। কত কষ্ট সহ্য করেছি- ঘরটা রক্ষা করার জন্য। কিন্তু গোমতীর বাঁধ ভেঙে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু দুমড়ে-মুচড়ে দিল।
নানুয়ার বাজার এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন,এ জায়গায় টেকসই বাঁধ না হলে প্রতি বন্যায় এভাবে সবাইকে বাড়িঘর হারাতে হবে।
গোমতী চরের কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, 'প্রবাস ছেড়ে এলাকায় কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এবারের বন্যায় ৪০ শতক জায়গার আখ চাষ আমার নষ্ট হয়েছে। এই ধাক্কা কীভাবে কাটিয়ে উঠবো, জানি না।' এদিকে, ৩১ আগষ্ট, শনিবার বুড়িচং উপজেলায় আসেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এসময় তিনি গোমতীর পাড় ভেঙে বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজ খবর নেন এবং জরুরি এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র হস্তান্তর করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার নিকট।