মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
একদিকে গরম তার ওপর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে একটানা মাংস ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ঈদ পরবর্তী সময়ে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ডায়রিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য রোগনিরাময় কেন্দ্রেগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসছেন নানা বয়েসী মানুষ। তবে আক্রান্ত এসব রোগীর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।
মঙ্গলবার ( ২৭জুন ) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, ঈদ পরবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত মসলাযুক্ত খাবার, বাসি খাবার ও উপর্যুপরি খাবারের ফলে এ সময়টায় অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিনই মাংস রান্না হচ্ছে, এরমধ্যে চুলায় জ্বালানো বাসি মাংস ও মসলাযুক্ত খাবার ক্রমাগত খাওয়ার কারণে ফুড পয়জনিং হয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়ার রোগী চোখে পড়ার মতো। ডায়রিয়া রোগীরা বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কোন কোন রোগীর পানিশূন্যতা দেখা গেলে সেসব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অধিকাংশ রোগীই চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদের পর দিন থেকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে, তবে প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি।
সূত্র জানায়, গত ১৮ জুন ঈদের পর দিন থেকে সোমবার ২৪ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৬ জন রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়াও জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন দেড় শতাধিক ডায়রিয়া রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি আছেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ( ৮২ )। তিনি উপজেলার দীর্ঘভূমি এলাকার বাসিন্দা। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রথমে বমি ও পেট ব্যথা শুরু হয় তার। তারপর ডায়রিয়া শুরু হলে বাড়িতে থেকেই তিনি চিকিৎসা চালাচ্ছিলেন। পানিশূন্যতা দেখা দিলে স্বজনরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করান। এখন তিনি অনেকটা ভালো আছেন।
তার পাশের বেডে হাতে স্যালাইন লাগানো মাফিয়া বেগম শুয়ে আছেন। কথা হয় তার পাশে বসে থাকা তার মেয়ে আফরোজা লাকি'র সঙ্গে। তিনি বলেন, একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম পরিবারের সবাই। ওখান থেকে ফেরার পর থেকে আম্মুর পেট ব্যথা শুরু হয়। এর কিছুসময় পর শুরু হয় পাতলা পায়খানা। তারপর আমরা আম্মুকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন আম্মু অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, কোরবানির ঈদের পর ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এ সময়টায় মাংসই খাওয়া হচ্ছে বেশি। গরুর মাংসে থাকা ব্যাকটেরিয়া ই,কোলাই ও সি. পারফ্রিনজেন এর প্রভাব বেশি থাকায় একটানা গরুর মাংস খাওয়ার ফলেও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার একটানা না খাওয়াই ভালো। কারণ এসব খাবার একটানা খেলে হজমশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটে বলে পাতলা পায়খানা হয়।
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ডাবের পানি ও কাঁচকলা খাওয়ানো যেতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে রোগীর পানিশূন্যতা দেখা দিলে রোগী হাসপাতালে এসে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।