মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টি বেশিরভাগ এলাকায় ক্ষতিসাধন করলেও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার আউশ চাষিদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। আউশ মাঠে পর্যাপ্ত পানি জমায় আবাদে তোড়জোড় শুরু করেছে কৃষকরা।
জানা গেছে, এ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের আগে বৃষ্টির অভাবে আর তীব্র রোদে আগে থেকে তৈরি করা আউশের বীজতলা ও আউশ মাঠ শুকিয়ে বৈরী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এতে আউশ আবাদ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন আউশ চাষিরা। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিতে আউশ মাঠে পানি জমায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এখন আউশের মাঠে মাঠে পুরোদমে চলছে জমি প্রস্তুত ও ধানের চারা রোপণের কাজ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজর ৪৯৬ হেক্টর। অনাবৃষ্টির কারণে আউশ আবাদ সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে অঝোর বৃষ্টিতে আউশের মাঠে মাঠে পানি জমেছে। এতে এই উপজেলার আউশ চাষিদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এখন মাঠে মাঠে চলছে আউশ আবাদের কাজ। আউশ আবাদে কৃষকদের সবরকমের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন আউশ মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিতে আউশ মাঠ পানিতে টইটম্বুর। মাঠে মাঠে চলছে বীজতলা থেকে চারা তোলা, জমি প্রস্তুত ও জমিতে আউশ ধানের চারা রোপণের কাজ। কৃষকদের মধ্যে ফিরেছে প্রাণের সঞ্চার। জমা পানিতে আউশ আবাদে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার দীর্ঘভূমি এলাকার আউশ চাষি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আউশ ধান পুরোপুরি বৃষ্টিনির্ভর ফসল। এই ধান রোপণের শুরু থেকে ধান গজানো পর্যন্ত কৃষকদের বৃষ্টির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে এ বছর আউশ ধানের বীজতলা তৈরি থেকে আউশ ধানের চারা রোপণের সময়টাতে টানা দাবদাহের ফলে আউশের জমি পানিশূন্য হয়ে শুকিয়ে পড়েছিল। এর ফলে আউশ আবাদ বাধাগ্রস্ত হয়। পরে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় মাঠে মাঠে বৃষ্টির পানি জমে আউশ আবাদকে সুগম করে তুলেছে। আমরা এখন জমি প্রস্তুত ও জমিতে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছি।
উপজেলার বেজুড়া এলাকার আউশ চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, তীব্র খরায় মাঠ শুকিয়ে গিয়েছিল। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে আউশ আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিছু কিছু কৃষক পুকুর, ডোবা বা খাল থেকে সেচের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে জমিতে আউশ আবাদ করেছে। তবে বৃষ্টির অভাবে সেসব জমিতেও সেরকম প্রাণচাঞ্চল্য ছিল না। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারি বৃষ্টির ফলে এখন সব জমিতে ভরপুর পানি জমেছে। এতে অধিকাংশ কৃষকই আউশ আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, আউশ ধান বৃষ্টিনির্ভর ফসল। অর্থাৎ আউশ ধান উৎপাদনে বৃষ্টির পানিই যথেষ্ট। চলমান খরার মধ্যে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে পানি জমায় ব্রাহ্মণপাড়ার কৃষকরা এখন আউশের জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত। আউশের আবাদ বাড়ানোর লক্ষে এই উপজেলায় ৩ হাজার ৮০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের বীজ এবং সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশালের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো পানির নিচে। সুন্দরবনে রেখে গেছে বড় ক্ষত। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক পরিবার।