সাকলাইন যোবায়ের, সিলেট ।।
সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার শরীফে ভক্ত-আশেকানদের ঢল নেমে শুরু হয়েছে ওলিকুল শিরোমনি হযরত শাহজালাল (রহ.) এর ৭০৫ তম ওরস মোবারক। রেমালের বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করেও অসংখ্য ভক্ত ও আশেকানদের এক মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে।
বুধবার (২৯ মে ) সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দু’দিনব্যাপী ওরস মোবারক।
তুমি রহমতের দরিয়ারে বাবা, রহমতের দরিয়া, দয়া করো মোরে হজরত শাহজালাল আউলিয়া।
বাংলাদেশের ওলিগণের তুমি মহিপাল, তুমি আমার মনকাণ্ডারি দয়াল শাহজালাল আরেফ শাহজালাল। নানান ভক্তিমূলক গানে মুখরিত হয়ে উঠেছে মাজার প্রাঙ্গণ। মঙ্গলবার ( ২৮ মে ) সকালে মাজার শরীফে গেলাফ চড়ানোর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে ওরসের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
যদিও সোমবার রাত ১২ টা থেকে মাজার গোসল,আগত ভক্ত আশেকানদের শিরনী রান্নার জন্য গরু ছাগল মহিষ জবাই করে হয়েছে।
এ উপলক্ষে জেলা ও টুরিস্ট পুলিশ, র্যাব, এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা।
প্রতি বছর আরবি মাসের ১৯ ও ২০ জিলক্বদ ওরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। ওরস উপলক্ষে মাজারে গিলাফ প্রদান করেছেন সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বিশাল গরু দরবারে নজরানা প্রদন করেন এবং প্রধান মন্ত্রীর কনিষ্ট বোন শেখ রেহানার নামের একটি গরু প্রদান করেন।
রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভক্ত-আশেকানরা বলেন, হযরত শাহজালালের (রহ.) টানে প্রতিবছর শত কষ্ট স্বীকার করেও হলেও ছুটে আসেন তারা। নিজেদের জীবনের সন্তুষ্টির পাশাপাশি ভক্তরা প্রার্থনা করেন দেশ ও দশের মঙ্গল। কেবল ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই নয়, বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষের পদচারণায় দরগাহ প্রাঙ্গণ যেন হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক মিলন মেলার তীর্থভূমি।
কুমিল্লা থেকে আসা আরফে রাব্বানী শাহ আবদুস সোবহান রিসার্চ সোসাইটির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, দুই বছর করোনার জন্য এবং ২০২৩ সালে সিলেটে ভয়াবহ বন্যার কারণে ভক্তরা ওরস করতে পারেনি। এ বছর তাই ভক্তদের ঢল নেমেছে। কয়েকদিন ধরে ভক্ত-আশেকানদের ভিড় বেড়েই চলেছে মাজার এলাকায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওরসে শরীক হতে আসতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের অনেকেই অবস্থান করছেন মাজারের আশপাশের হোটেলগুলোতে।
দরগাহ্ এর পাশের হোটেল আল আরব এর সিনিয়র ম্যানেজার হুমায়ুন কবির নবিন জানান, দরগাহ্ পাশে পরস শরীফ উপলক্ষে আবাসিক হোটেলের কোন রুম খালি নেই ৪ দিন যাবত। লোকজন কোনমতে একটি খালি রুমের ব্যাবস্থা করে দেয়ার জন্য বললেও পাওয়া যায়নি
আবার অনেকেই বাস ট্রাক নিয়ে এসেছেন, অবস্থান করছেন গাড়িতেই। ফলে মঙ্গলবার থেকেই মাজার এলাকা মুখর হয়ে উঠেছে হাজারও লোক সমাগমে।
ওরস উপলক্ষে ভক্ত-আশেকানরা শতাধিক গরু ও খাসি এনেছেন নজরানা হিসাবে। যা দিয়ে সারাদেশ থেকে আসা ভক্ত-আশেকানদের জন্য শিরনি করা হয়। শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত জিকির ও এবাদত বন্দেগির মাধ্যমে ভক্তরা সময় অতিবাহিত করবেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেছেন,র্যাব,পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ,ওরস উপলক্ষে বিশেষ স্পেশাল পুলিশ সদস্যদের প্রস্তত রাখা হয়েছে।
এদিকে ওরসকে ঘিরে মাজার প্রাঙ্গণে বসেছে বাউলদের আসর। শান্তিপূর্ণভাবে বার্ষিক এই উৎসব সম্পন্ন করতে মাজার কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩ স্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি পাশাপাশি রয়েছে দরগাহর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম। দরগাহর নিজস্ব আইনশৃঙ্খলা তদারকি বাহিনির সদস্য প্রায় ৪ শতাদিক।
হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহর সাধারণ সম্পাদক শামুন মাহমুদ খান বলেন, মাজার কমিটি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এবার পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ওরসকে কেন্দ্র করে ভক্ত ও আশেকানদের ভীড় লক্ষনীয়। প্রথম দিন বৃষ্টি থাকলেও ওরসের দিন ১১ টার পর থেকে বৃষ্টি না থাকায় শাহজালাল বাবার ওরসে ভক্ত ও আশেকানদের উপচে পরা ভীড় লক্ষ্যনীয়।
ওরস শরীফের সরেকওম মোতওয়ালী ফতেহ উল্লাহ আল আমান জানান, আমরা আল্লাহর রহমতে শাহজালাল বাবার ওরসের সব কার্য সম্পাদন করেছি।