মোঃ রেজাউল হক শাকিল ।।
কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের লারোচৌ গ্রামে প্রেমে বাধা দেওয়ায় ছেলে কর্তৃক মাকে খুন করা হয়।
২২ এপ্রিল (সোমবার) পুলিশ নিহতের ছেলে রিয়ান (১৬) কে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়।
থানা সূত্রে যানা যায়, ব্রাহ্মণপাড়া থানার শিদলাই ইউনিয়নের লারোচৌ গ্রামে নিহতের লাশ মাজু মিয়ার বাড়ির পাশের ডুবার পানিতে লাশ দেখে এলাকাবাসী ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ২১ এপ্রিল শিউলী আক্তার (৩৫)এর লাশ বাড়ির পাশের মাজু মিয়ার ডুবা থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে ব্রাহ্মণপাড়া থানাপুলিশ স্বজনদের নিকট পুলিশ নিহতের লাশ হস্তান্তর করে। এ বিষয়ে নিহতের নানী ঝর্ণা বেগম বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই দিন ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশ নিহতের স্বামী সুমন ৪৫ কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম ভিকটিম এর বড় ছেলে মোঃ রিয়ানকে সন্দেহ হইলে গত ২২/০৪/২০২৪ইং তারিখ আটক করিয়া পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করিলে ভিকটিম এর বড় ছেলে মোঃ রিয়ান সুকৌশলে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে তাহার বাবা ১নং আসামীকে উক্ত হত্যা কান্ডের সহিত জড়িত করিয়া জবানবন্দী প্রদান করিতে থাকেন। জবানবন্দীর একপর্যায়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মিথুন কুমার মন্ডল এর নিকট উক্ত হত্যা কান্ডের সহিত সে নিজেই জড়িত মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। মামলাটি তদন্তকালে ভিকটিম এর বড় ছেলে মোঃ রিয়ান ঘটনার দিন গত- ১৯/০৪/২০২৪ইং তারিখ রাত আনুমানিক ২১.৩০ ঘটিকার সময় মোঃ রিয়ান এর পাশের বাড়ীর কাকা সাগর (২৩) তাদের ঘরে আসে এবং মোঃ রিয়ানকে ডেকে তার সাথে বাহিরে নিয়া যায়। মোঃ রিয়ান তার কাকার সাথে গল্প শেষে একই তারিখ রাত আনুমানিক ২৩.০০ ঘটিকার সময় মোঃ রিয়ান ঘরে আসিলে তার মা তাকে সিগারেট খাওয়া নিয়া গালি দেয় এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়া মোঃ রিয়ান এর সাথে ঝগড়া করে। মোঃ রিয়ান এর এলাকার একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক আছে। উক্ত বিষয়টি মোঃ রিয়ান এর মা (ভিকটিম) ও বাবা জানতে পারে। উক্ত প্রেমের সম্পর্কের কারনে মোঃ রিয়ান বাবা এবং মার ভিকটিম) সাথে ঝগড়া হয়। মৃত ভিকটিম শিউলী আক্তার মোঃ রিয়ান এর প্রেম বিষয় নিয়ে এবং ঘরের কাজকর্ম না করায় মোঃ রিয়ানকে গালি দেয় এবং মোঃ রিয়ানকে ঘর থেকে বাহির হয়ে চলে যেতে বলে। রাত ২৩.৩০ ঘটিকার সময় তখন মোঃ রিয়ান তার মাকে (ভিকটিম) একটা লাঠি দিয়া পিটায়। তখন মৃত ভিকটিম শিউলী আক্তার মোঃ রিয়ানকে আরো গালাগালি করলে মোঃ রিয়ান খাঁটের পাশে থাকা লোহার শাবল দিয়া কপালের উপরে একাধিক আঘাত করলে মৃত ভিকটিম শিউলী আক্তার রক্তাক্ত অবস্থায় খাটে পড়ে যায়। মৃত ভিকটিম শিউলী আক্তার কোন ধরনের নড়াছড়া না। করলে মেঃ রিয়ান মুখে এবং বুকে হাত দিয়ে দেখে যে, মৃত ভিকটিম শিউলী আক্তার মারা গেছে মর্মে ধারনা হলে, বিছানা, বালিশ, মাটিসহ আশপাশ রক্তে ভিজে যায়। মোঃ রিয়ান কোন উপায় না। ওড়না দিয়া পা দুইটা দেখে বিছনার চাঁদর দিয়া ভিকটিমের রক্তাক্ত মাথা বাঁধে এবং গায়ের ওড়ন বেঁধে ফেলে। রক্ত লাগা কাপড়গুলা লাশের উপর দিয়া বিছনার চাঁদর দ্বারা বাঁধে। মোঃ রিয়ানের ছোট ভাইয়ের শার্ট শার্ট দিয়া ঘরে পড়া রক্তগুলা মুছে ফেলে। পরবর্তী ২০/০৪/২০২৪ইং তারিখ ০১.০০ ঘটিকার সময় ঘরের দরজা খুলে সাবধানে ঘর থেকে মৃতদেহ বাহির করিয়া পা বাঁধা অবস্থা ওড়না দিয়া টেনে বাড়ির ঘরের পিছনে নিয়া যায়। একপর্যায়ে গাছের শিকড়ের। শিউলি আক্তারের পড়নের কাপড় আটকে যায়। অনেক চেষ্টা করে মোঃ রিয়ান শিকড় থেকে কাপড় ছুটিয়ে বাড়ীর থকে ভিকটিম এর সাথে মৃত ভিকটিম পিছনে কিছু দূরে ঘটনাস্থলে কচুরী ফেনার ডোবার মধ্যে ফেলে দেয়। পরে মোঃ রিয়ান পুনরায় ঘরে আসিয়া টিউবওয়েলে গোসল। করে এবং রক্তামাখা যাওয়ায় তোষকটা বালিশটি বাহির করিয়া গোয়াল ঘরের টিনের উপরে ফেলে দেয় এবং খাটের উপর রক্ষিত তোষকে রক্তের দাগ দেখা। কটিম এর ছেলে মোঃ উল্টো দেয়, লোহার শাবলে থাকা রক্ত ধুয়ে ফেলে এবং পরে মোঃ রিয়ান দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকে। মৃত ভিকটিম ও রিয়ান ঘটনার পর থেকে সু-কৌশলে কথাবার্তা কম বলে এবং খুনের প্রকৃত রহস্য আড়াল করিয়া তাহার বাবাকে মেঃ সুমনকে। করিয়া আকার ইঙ্গিতে তাহার বাবার সহিত তাহার মা ভিকটিমের বিভিন্ন পারিবারিক কলহ কথা উল্লেখ করিয়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এবং নিকট আত্মীয়-স্বজনদেরকে তার বাবা তার মাকে হত্যা করেছেন মর্মে বিশ্বাস করানোর জন্য চেষ্টা করে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ এস এম আতিকুল্লাহ জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় সে নিজের দোষ স্বীকার করেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলার মূল রহস্য উদঘাটন হয়।