মো: ওমর ফারুক মুন্সী :
কুমিল্লার দেবিদ্বারে একটি সালিশ বৈঠকে শামীম আহাম্মদ (৪১) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম্য সালিশদারদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বার রাত ১১টার দিকে গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের উজানীকান্দি গ্রামের খেলার মাঠে পূর্ব পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শামীম আহাম্মদ ওই গ্রামের মৃত আবদুল খালেক মিয়ার ছেলে।
নিহত শামীম গত ৬ মাস আগে ওমান থেকে দেশে ফিরে বাড়ির পাশে একটি চা দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য জানার স্বার্থে তাদের নাম জানায়নি পুলিশ।
এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারের দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসীরা। ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শী এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, গত শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে ৮টার দিকে মনির হোসেন ও শামীম আহাম্মদের পরিবারের মধ্যে একটি বিরোধ মীমাংসা নিয়ে মনির হোসেনের উঠানে সালিশ বৈঠক বসেছিল। সেখানে গ্রাম্য সালিশদার ইউপি সদস্য হিরণ সরকার, সিদ্দিক সরকার, মোস্তফা সরকার, সাইফুল ইসলাম ব্যাপারিসহ গ্রামের ১৫/২০জনকে উপস্থিত হোন। সালিশ মীমাংসার শেষ পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় উজানীজোড়া গ্রামের মো.আলিম খন্দকারের নেতৃত্বে সাদেক খন্দকার, সুমন খন্দকার, আউয়াল খন্দকারসহ আরও ৫/৬ মনির হোসেনের পক্ষে উপস্থিত হলে বৈঠকে হট্টগোল শুরু হয়।
বৈঠকের এক পর্যায়ে সাদেক খন্দকার বলে উঠেন, তোমরা কি হাত কি ব্যাংকে রাইখ্যা আসছো ? এ কথা বলার সাথে সাথে সুমন খন্দকার শামীমকে চর থাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। পরে বৈঠকে বসা আলিম খন্দকার উত্তেজিত হয়ে নিজের বসার কাঠের চেয়ার তুলে শামীমকে এলোপাতারি আঘাত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে শামীম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার ১৩ (এপ্রিল) দুপুর ২টা ৩৫মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্বজনরা শামীমের মরদেহ এলাকায় নিয়ে আসলে কান্নায় ভেঙে পড়েন শামীমের বৃদ্ধা মা জোবেদা খাতুন ও আত্মীয় স্বজনরা। ছেলের মরদেহের সামনে বুক চাপড়ে বিলাপ করতে করতে জোবেদা খাতুন বলছিলেন, আইনের কাছে, সরকারের কাছে আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই, তাদের ফাঁসি চাই। তারা আমার চোখের সামনে আমার সোনার মানিককে পিটিয়ে মারল। পিঠাতে পিঠাতে তিনটা চেয়ার ভাঙছে। তারা আমার ছেলেকে বাঁচাতে আসল না। মরদেহের পাশে নিহত শামীমের স্ত্রী ও সন্তানদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন এলাকাবাসী। তবু তাঁদের শান্ত করা যাচ্ছিল না তাদের। স্বামীকে হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন শামীমের স্ত্রী মোর্শেদা ও তাঁর সন্তানরা। তাঁরাও বার বার চিৎকার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত আলিম খন্দকারের বাবা আবু মুসা খন্দকার বলেন, প্রেম ঘটিত বিষয়ে নিয়ে একটি শালিশ বৈঠক বসে। আমাদের বাড়ির এক লোক ওই বাড়ির ননদ বিয়ে করছে। তাঁরাই আমার ছেলেকে খবর দিয়ে নিয়ে গেছে। লোকজনের মুখে শুনেছি, শামীম আহাম্মদ শালিশ বৈঠকে একটি মেয়ে তার জন্মের বলে চিৎকার করায় আমার ছেলে উঠে চেয়ার দিয়ে আঘাত করে। আমি এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে পারব না।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নয়ন মিয়া বলেন, খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তরে জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা জোবেদা খাতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।